Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি আন্দোলন করবে করুক, কিন্তু দুর্বৃত্তায়ন করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি মাঠে নামতে চায়, জামায়াত এবং আরও অনেকেই। তারা আন্দোলন করুক, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার কোনো রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি তারা কোনোরকম দুর্বৃত্তায়ন করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।

শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯টা বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। যারা ক্ষমতায় ছিল, নিজের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত ছিল, দেশের মানুষের জন্য না। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমি যার জন্য বলেছি—ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কাজেই এ ক্ষেত্রেও কেউ কারও ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তাতে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে। যেটা আগে করেছিল, আগামীতে যেন করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমার অনুরোধ কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুত শেষ করতে আইনজীবীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এরা এত অন্যায় করেছে। এদের বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না। এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল এখন আন্দোলনের সুযোগ সামনে আসছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। এই অপরাধীরা যাতে যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারহীনতা যেন না চলে, ন্যায় বিচার যেন মানুষ পায়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেঈমান মোস্তাক ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। যারা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ায়, তারা বেইমানদের ব্যবহার করে, কিন্তু রাখে না। এটাই হলো বাস্তবতা। মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে জিয়া। ক্ষমতা দখল করে। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে। নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে ২/৩ শতাংশ মেজোরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। বিচার কাজে নারীদের যাওয়ার পথ সুগম করেন জাতির পিতা। তার হাত ধরে আমরা সেটা আরও সহজ করে দিয়েছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়ার পর আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন।

আইনজীবী ও বিচারকের ওপর বিএনপি জামায়াত হামলা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিএনপি জামায়াত এদেশে মানুষের ওপর আক্রমণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সারা বিশ্বব্যাপী কিছু মন্দা ভাব যাচ্ছে। তার হাত থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায়নি। তবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন সেই সঙ্গে নতুন করে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা হয়েছে। হাসপাতালে হামলা করে নারী শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আছে রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন। অথচ জাতির পিতা ১৯৭২ সালে যখন শাসনভার হাতে নেন কোনও রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনও মুদ্রা ছিল না। খাদ্য ছিল না।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার হাত ধরে বাংলাদেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন ঘটে। জাতির পিতা আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড করে দিয়ে যান। জাতির পিতা আমাদের যে পদক্ষেপ দিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে আমরা চলি।

5

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বেঈমান মুনাফিক খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানের সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে, কিন্তু টিকতে পারেনি। পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ায় তারা বেঈমানদের ব্যবহার করে, রাখে না। মোস্তাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের। একাধারে সেনাপ্রধান সঙ্গে সঙ্গে আবার নিজেকে রাষ্টপতি ঘোষণা দেয়। জিয়াউর রহমান জনগণের ভোট চুরি করে, নির্বাচনি প্রক্রিয়া ধ্বংস করে, এরপর দল গঠন করে। জনগণের ভোট কারচুপি করে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দিয়ে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থার মান উন্নয়নে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল বাংলাদেশ ছিল সন্ত্রাসীদের দেশ। জঙ্গিদের দেশ, দুর্নীতির দেশ। দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তারা দেশের অর্থপাচার করেছে।

তিনি বলেন, আমাকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। দমে যাওয়ার না। নিজের জীবনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে রাজনীতি করি না। রাজনীতি করি এদেশের মানুষের জন্য। কাজেই আমার সংগ্রাম আমি চালিয়ে যাই।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সব জেলায় আইনজীবীদের জন্য ভবন নির্মাণ করে দেবে। এজন্য তিনি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনেরও আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া জড়িত এটা প্রমাণিত সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সবচেয়ে বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, জুডিশিয়ারি যাতে স্মার্ট হয় সেজন্য প্রতিটি আইন ডিজিটালাইজড করা রায়গুলো ডিজিটালাইজড করা, ইংরেজি রায়গুলো যাতে বাংলায় অনুবাদ যাতে হয়, সেটা যেন অনলাইনে পরিচালিত হয় মানুষ যাতে দেখতে পারে সেটা চাই।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নত করবো, পাশাপাশি আইনের শাসন চলবে। আত্মসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে, দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। একটা রাষ্ট্রকে সকলে মিলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারি। মনে রাখতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনোরকম যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণ যেন আমরা করে যেতে পারি। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। আমাদের লক্ষ্য কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা সকলের জন্য কাজ করি।

6

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান প্রত্যেকে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এক্ষেত্রে কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকে সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য সবকিছু তিনি করে গেছেন। সমুদ্র সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি শুরু করেছেন। যা আমরা শুরু করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই যে একজন মানুষ কীভাবে এক জীবনে এতগুলো কাজ করতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান শুধু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশই নয়, নির্বাচনী ব্যবস্থা নষ্ট করা, হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যেটা সামরিক আইন ও বিধান ভঙ্গ করে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তিনি আরও বলেন, যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা, যে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন আমরাই বাস্তবায়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সড়ক, রেল, স্কুল, কলেজ মসজিদ, মাদারাসাসহ সব জিনিস গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় তিনি বিচার বিভাগের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় তিনি দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন। যেটা সারা বিশ্বে বিরল। কোনো দেশ এত দ্রুত সংবিধান দিতে পারেনি। জাতির পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশে বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা শুধু সংবিধানই দেননি, সাথে সাথে ৭২ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাক্টিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস ১৯৭২ জারি করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্ধ দেন। ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করে বেনেভোলেন্ট ফান্ড গঠন করেন। তখন ৫০ হাজার টাকার অনেক মূল্য। আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ডও তিনি তৈরি করে দিয়ে যান। তার অবদান সকলেরই মনে রাখা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানবধিকার, ন্যায় বিচার, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য সমস্ত কিছু জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন। সমুদ্র সীমায় আমাদের যে অধিকার রয়েছে, সে সমুদ্র সীমা আইন তিনি ‘৭৪ সালে করে দেন। জাতিসংঘ করেছিল ১৯৮২ সালে। আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি, আইন করে এবং সংবিধান সংশোধন করে এই স্থল সীমায় আমাদের যে অধিকার সেটাও তিনি প্রস্তুত করে যান। যুদ্ধপরাধীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারকাজও তিনি শুরু করেছিলেন। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন ও কাঠামো তিনি করে দিয়ে গেছেন। আমি নিজেও অবাক হই, একটা মানুষ কীভাবে এত কাজ করেছেন!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, পাকিস্তান আমলে আইন ছিল, জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা যেতে পারবেন না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে আইন পরিবর্তন করে নারীরাও যেন জুডিশিয়ালে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা করেন। তারই পধ ধরে সর্বপ্রথম ২০০০ সালে আমরাই ব্যবস্থা করে দিই, নারীরা যেন উচ্চ আদালতে বিচারপতি হতে পারেন।

12

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। আমরা যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে স্বজন হারিয়েছি, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু সে অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৫ আগস্ট আমি আর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে বাঁচা বাঁচার মতো না। ‘৮১ সালে দেশে আসার সুযোগ পাই। রেহানার পার্সপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার পাসপোর্ট দেয়নি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ যখন ৮১ সালে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, তখন আমি এমন একটা দেশে ফিরে এসেছিলাম, যেখানে পিতা-মাতা-ভাইদের হত্যা করেছিল, কিন্তু সে হত্যাকারীদের বিচার হয়নি, আর তারা ক্ষমতায়। আপনারা একবার ভেবে দেখেন, যেখানে আমি বাবা-মা হত্যার বিচার পাবো না সে আইন রয়েছে, যেখানে যুদ্ধপরাধীদের মুক্ত করে ক্ষমতায় বসানো হয়েছেৃ. এসেছি শুধু একটা কারণে, জাতির ওপর যে বিচারহীনতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সাথে সাথে বাংলার দুখী মানুষদের পরিবর্তন হয়নি, এদেশের আপামর জনতা শোষণ-বঞ্চনার শিকার ছিল। আমি তাদের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে দেশে এসেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায়। ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। আমরা স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালত, স্থায়ী আইন কমিশন ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি এবং আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণয়ন করি। সরকারি আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ কল সেন্টার গঠন করি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী

বিচারকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে কাকরাইলে ২০তলা বিশিষ্ট বিচারপতি ভবন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজিমপুরে ২০তলা বিশিষ্ট জাজেস কোয়ার্টার করে দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী সমিতির ভবন করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। আমি জানি, আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার একটি দাবি আছে। তবে আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে পর্যায়ক্রমে সেটি করে দিতে পারবো। তবে একটা শর্ত আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আইনজীবীদের কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড তৈরি করেন, আপনারাও কিছু দেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমি তো বলেছি— আমরা করে দেবো।

তিনি বলেন, সব জেলায় যারা সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের মাসিক রিটেইন ফি চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মামলার শুনানির জন্য দৈনিক ফি এবং ভেলুয়েশন ফি বাড়ানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আবারও ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

বিএনপি আন্দোলন করবে করুক, কিন্তু দুর্বৃত্তায়ন করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি মাঠে নামতে চায়, জামায়াত এবং আরও অনেকেই। তারা আন্দোলন করুক, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার কোনো রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি তারা কোনোরকম দুর্বৃত্তায়ন করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।

শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯টা বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় নাই। যারা ক্ষমতায় ছিল, নিজের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত ছিল, দেশের মানুষের জন্য না। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমি যার জন্য বলেছি—ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কাজেই এ ক্ষেত্রেও কেউ কারও ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তাতে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে। যেটা আগে করেছিল, আগামীতে যেন করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমার অনুরোধ কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুত শেষ করতে আইনজীবীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এরা এত অন্যায় করেছে। এদের বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না। এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল এখন আন্দোলনের সুযোগ সামনে আসছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। এই অপরাধীরা যাতে যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারহীনতা যেন না চলে, ন্যায় বিচার যেন মানুষ পায়।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেঈমান মোস্তাক ক্ষমতা দখল করে। টিকতে পারেনি। যারা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ায়, তারা বেইমানদের ব্যবহার করে, কিন্তু রাখে না। এটাই হলো বাস্তবতা। মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে জিয়া। ক্ষমতা দখল করে। ইনডেমনিটি জারি করে আমাদের বিচার থেকে বঞ্চিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে। নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে ২/৩ শতাংশ মেজোরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করে।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে দিয়ে যান। বিচার কাজে নারীদের যাওয়ার পথ সুগম করেন জাতির পিতা। তার হাত ধরে আমরা সেটা আরও সহজ করে দিয়েছি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়ার পর আইনজীবীদের পাশে দাঁড়ানোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন।

আইনজীবী ও বিচারকের ওপর বিএনপি জামায়াত হামলা করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিএনপি জামায়াত এদেশে মানুষের ওপর আক্রমণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সারা বিশ্বব্যাপী কিছু মন্দা ভাব যাচ্ছে। তার হাত থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায়নি। তবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন সেই সঙ্গে নতুন করে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা হয়েছে। হাসপাতালে হামলা করে নারী শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আছে রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেন। অথচ জাতির পিতা ১৯৭২ সালে যখন শাসনভার হাতে নেন কোনও রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনও মুদ্রা ছিল না। খাদ্য ছিল না।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার হাত ধরে বাংলাদেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন ঘটে। জাতির পিতা আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড করে দিয়ে যান। জাতির পিতা আমাদের যে পদক্ষেপ দিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে আমরা চলি।

5

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বেঈমান মুনাফিক খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানের সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে, কিন্তু টিকতে পারেনি। পেছন থেকে যারা কলকাঠি নাড়ায় তারা বেঈমানদের ব্যবহার করে, রাখে না। মোস্তাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের। একাধারে সেনাপ্রধান সঙ্গে সঙ্গে আবার নিজেকে রাষ্টপতি ঘোষণা দেয়। জিয়াউর রহমান জনগণের ভোট চুরি করে, নির্বাচনি প্রক্রিয়া ধ্বংস করে, এরপর দল গঠন করে। জনগণের ভোট কারচুপি করে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দিয়ে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থার মান উন্নয়নে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল বাংলাদেশ ছিল সন্ত্রাসীদের দেশ। জঙ্গিদের দেশ, দুর্নীতির দেশ। দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তারা দেশের অর্থপাচার করেছে।

তিনি বলেন, আমাকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। দমে যাওয়ার না। নিজের জীবনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে রাজনীতি করি না। রাজনীতি করি এদেশের মানুষের জন্য। কাজেই আমার সংগ্রাম আমি চালিয়ে যাই।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সব জেলায় আইনজীবীদের জন্য ভবন নির্মাণ করে দেবে। এজন্য তিনি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনেরও আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ এর বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া জড়িত এটা প্রমাণিত সত্য। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সবচেয়ে বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, জুডিশিয়ারি যাতে স্মার্ট হয় সেজন্য প্রতিটি আইন ডিজিটালাইজড করা রায়গুলো ডিজিটালাইজড করা, ইংরেজি রায়গুলো যাতে বাংলায় অনুবাদ যাতে হয়, সেটা যেন অনলাইনে পরিচালিত হয় মানুষ যাতে দেখতে পারে সেটা চাই।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নত করবো, পাশাপাশি আইনের শাসন চলবে। আত্মসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে, দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো। একটা রাষ্ট্রকে সকলে মিলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারি। মনে রাখতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনোরকম যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণ যেন আমরা করে যেতে পারি। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। আমাদের লক্ষ্য কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা সকলের জন্য কাজ করি।

6

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান প্রত্যেকে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এক্ষেত্রে কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকে সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য সবকিছু তিনি করে গেছেন। সমুদ্র সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও তিনি শুরু করেছেন। যা আমরা শুরু করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই যে একজন মানুষ কীভাবে এক জীবনে এতগুলো কাজ করতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান শুধু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশই নয়, নির্বাচনী ব্যবস্থা নষ্ট করা, হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যেটা সামরিক আইন ও বিধান ভঙ্গ করে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তিনি আরও বলেন, যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা, যে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন আমরাই বাস্তবায়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, সড়ক, রেল, স্কুল, কলেজ মসজিদ, মাদারাসাসহ সব জিনিস গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় তিনি বিচার বিভাগের দিকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় তিনি দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন। যেটা সারা বিশ্বে বিরল। কোনো দেশ এত দ্রুত সংবিধান দিতে পারেনি। জাতির পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশে বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা শুধু সংবিধানই দেননি, সাথে সাথে ৭২ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাক্টিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস ১৯৭২ জারি করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্ধ দেন। ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করে বেনেভোলেন্ট ফান্ড গঠন করেন। তখন ৫০ হাজার টাকার অনেক মূল্য। আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ডও তিনি তৈরি করে দিয়ে যান। তার অবদান সকলেরই মনে রাখা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানবধিকার, ন্যায় বিচার, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য সমস্ত কিছু জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন। সমুদ্র সীমায় আমাদের যে অধিকার রয়েছে, সে সমুদ্র সীমা আইন তিনি ‘৭৪ সালে করে দেন। জাতিসংঘ করেছিল ১৯৮২ সালে। আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি, আইন করে এবং সংবিধান সংশোধন করে এই স্থল সীমায় আমাদের যে অধিকার সেটাও তিনি প্রস্তুত করে যান। যুদ্ধপরাধীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারকাজও তিনি শুরু করেছিলেন। আর সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন ও কাঠামো তিনি করে দিয়ে গেছেন। আমি নিজেও অবাক হই, একটা মানুষ কীভাবে এত কাজ করেছেন!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, পাকিস্তান আমলে আইন ছিল, জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীরা যেতে পারবেন না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে আইন পরিবর্তন করে নারীরাও যেন জুডিশিয়ালে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা করেন। তারই পধ ধরে সর্বপ্রথম ২০০০ সালে আমরাই ব্যবস্থা করে দিই, নারীরা যেন উচ্চ আদালতে বিচারপতি হতে পারেন।

12

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। আমরা যারা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে স্বজন হারিয়েছি, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু সে অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৫ আগস্ট আমি আর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে বাঁচা বাঁচার মতো না। ‘৮১ সালে দেশে আসার সুযোগ পাই। রেহানার পার্সপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার পাসপোর্ট দেয়নি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগ যখন ৮১ সালে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে, তখন আমি এমন একটা দেশে ফিরে এসেছিলাম, যেখানে পিতা-মাতা-ভাইদের হত্যা করেছিল, কিন্তু সে হত্যাকারীদের বিচার হয়নি, আর তারা ক্ষমতায়। আপনারা একবার ভেবে দেখেন, যেখানে আমি বাবা-মা হত্যার বিচার পাবো না সে আইন রয়েছে, যেখানে যুদ্ধপরাধীদের মুক্ত করে ক্ষমতায় বসানো হয়েছেৃ. এসেছি শুধু একটা কারণে, জাতির ওপর যে বিচারহীনতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সাথে সাথে বাংলার দুখী মানুষদের পরিবর্তন হয়নি, এদেশের আপামর জনতা শোষণ-বঞ্চনার শিকার ছিল। আমি তাদের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে দেশে এসেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায়। ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। আমরা স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালত, স্থায়ী আইন কমিশন ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি এবং আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণয়ন করি। সরকারি আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ কল সেন্টার গঠন করি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী

বিচারকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে কাকরাইলে ২০তলা বিশিষ্ট বিচারপতি ভবন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজিমপুরে ২০তলা বিশিষ্ট জাজেস কোয়ার্টার করে দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী সমিতির ভবন করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। আমি জানি, আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার একটি দাবি আছে। তবে আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে পর্যায়ক্রমে সেটি করে দিতে পারবো। তবে একটা শর্ত আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আইনজীবীদের কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড তৈরি করেন, আপনারাও কিছু দেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমি তো বলেছি— আমরা করে দেবো।

তিনি বলেন, সব জেলায় যারা সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের মাসিক রিটেইন ফি চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মামলার শুনানির জন্য দৈনিক ফি এবং ভেলুয়েশন ফি বাড়ানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার।