নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু বিএনপি অন্ধ বলে উন্নয়ন দেখে না। মাইক লাগিয়ে বিএনপি সারাদিন ভাঙা রেকর্ডের মতো মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
রোববার (১৯ মার্চ) বিআইসিসি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সব ধরনের ইনস্টিটিউশন গড়ে দিয়েছি। আধুনিক চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে হাসপাতাল করতে আগে যন্ত্রপাতি আনতে ট্যাক্স অনেক পড়তো। ৯৬ সালে সরকারে এসে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বেসরকারিখাতে বড় বড় হাসপাতাল হয়েছে। সেই সব হাসপাতালে আজ চিকিৎসা নিয়ে তারা বলে আওয়ামী লীগ কিছু করে নাই।
আওয়ামী লীগের হাতে নেয়া প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেশকে পিছিয়ে দেয়া হয় দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে আমরা সরকার গঠনের পর বহু উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেসব কাজ বন্ধ করে। বিদ্যুতের কোনো উন্নয়ন তারা করতে পারেনি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করে ফেরার আগেই তা বন্ধ হয়ে গেছে। এতটা দুর্নীতি তারা করেছে।
মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা গ্রামে শহরের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করছি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এটি আমাদের নির্বাচনি ওয়াদা ছিল। এছাড়া ‘একটি বাড়ি একটি খামারের’ আওতায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে।
শিক্ষার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজ শতভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান। কিন্তু বিএনপি অন্ধ বলে উন্নয়ন দেখে না। মাইক লাগিয়ে সারাদিন ভাঙা রেকর্ডের মতো মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের করে দেয়া ডিজিটাল দেশের সুবিধা নিয়ে উল্টো বিএনপি সারাদিন বলে সরকার কোনো উন্নয়ন করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন জোড়াতালির পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। কিন্তু উনি জানেন না জোড়াতালি দিয়েই সেতু হয়। তাই ওখান থেকে তাকে পানিতে নামিয়ে দিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম কীভাবে চলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশকে জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আর লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে এদেশীয় কিছু বেঈমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই চেতনা ফিরিয়ে আনে। মাতৃভাষার আন্দোলন দিয়ে যাত্রা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তারই হাত ধরে আসে দেশের স্বাধীনতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে অসংখ্য সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। কিন্তু এতো অত্যাচার করেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তারা দমাতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে কেউ নিঃশেষ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চিন্তা-চেতনা নিয়ে এগিয়ে গেছে। যে দল মাটি ও মানুষ থেকে গড়ে ওঠে, তাকে উপড়ে ফেলা যায় না।
সরকারপ্রধান বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করে। ইতিহাস শুধু বিকৃত করা না, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আদর্শকে বিসর্জন দেয়। বাংলাদেশের মানুষ আবার সেই অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসে। ৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত, আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত; এই সময়টা যদি দেখেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে শুধু ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ৯৬ সালে যতটুকু আমরা অর্জন করে গিয়েছিলাম, ২০০১ সালের নির্বাচনের দিন থেকে বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার, নির্যাতনের স্বীকার হয় আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে তারা আক্রমণ করে, হত্যা করে, চোখ তুলে নেয়, হাত কেটে দেয়, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
বিএনপির কোনো শেকড় নেই মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, এরা (বিএনপি) অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনো আস্থাও নেই। যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, একটা লুটপাতের রাজত্ব কায়েম করেছে। এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিল এই দেশে। কিন্তু জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ এবং ৩৮ এর আংশিক সংশোধন করে মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যারা যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল, তাদেরকেও জিয়াউর রহমান মুক্তি দিয়েছিল। এরপর তাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করায়। এমনকি সাত খুনের আসামিকেও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়।
তিনি বলেন, বিএনপির তো কোনো শেকড় নেই। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি। কাজেই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনো আস্থাও নেই। এর ফলে তারা যখনই ক্ষমতায় আসে, শুধু মানুষের ওপর অত্যাচার করে। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, এরপর খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকেও কিন্তু জনগণের ভোট চুরির অপরাধে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল। এটা বোধ হয় বিএনপির নেতারা ভুলেই গেছে। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আর লুটপাটের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের সংবিধানে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধান আংশিক সংশোধন করে নিয়ে মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যারা যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল, তাদেরকেও জিয়াউর রহমান মুক্তি দিয়েছিল। এরপর তাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করায়। এমনকি সাত খুনের আসামিকেও রাজনীতি করার সুযোগ দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মই হয়েছিল বাঙালি জাতিকে একটি আত্মপরিচয়, একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য। মাতৃভাষার আন্দোলন দিয়ে যাত্রা শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তারই হাত ধরে আসে দেশের স্বাধীনতা।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে এদেশীয় কিছু বেঈমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই চেতনা ফিরিয়ে আনে।
এ সময় রমজান মাসে যাতে মানুষের কষ্ট না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে যাতে সাধারণ মানুষে কোনো কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে কেউ যাতে মজুতদারি, কালোবাজারি করে ভোগান্তি না বাড়ায় সে জন্য সবাইকে নজর রাখতে হবে।