Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাল্টিমোরে বিধ্বস্ত সেতু থেকে পড়া ছয় শ্রমিকের মৃত্যুর আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে জাহাজের ধাক্কায় ল্যান্ডমার্ক ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুধসের ঘটনায় নিখোঁজ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত ছয়জনই শ্রমিক ছিলেন। ঘটনার সময় সেতুর ওপরের একটি অংশ মেরামতের কাজ করছিলেন তারা।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে একটি জাহাজ সেতুর একটি পিলারে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, তারা তল্লাশি অভিযান শেষ করেছে।

ভেঙে পড়ার সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করছিল। সেতুটি ২ দশমিক ৬ কিমি (১ দশমিক ৬ মাইল) দীর্ঘ। কনটেইনার জাহাজটি এর একটি পিলারে ধাক্কা মারলে এটি ভেঙে পড়ে।

ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন কোস্ট গার্ড এবং পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

নিখোঁজদের সন্ধানে বিশাল অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর নৌকা এবং হেলিকপ্টার অংশ নেয়। এ ঘটনায় আরো দুজনকে পানি থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। ইউএস কোস্ট গার্ডের সদস্য রিয়ার অ্যাডমিরাল শ্যানন গিলরথ বলেছেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিরা পানির নিচে কতক্ষণ ছিলেন এবং সেখানে পানির তাপমাত্রা কত ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে তাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।’ হিমশীতল পানি ও বহু সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের বেঁচে থাকার কোনো আশা করছে না কর্তৃপক্ষ।

দেশটির কোস্ট গার্ড বলেছে, তারা অনুসন্ধান স্থগিত করেছে।

বেশ কয়েকটি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করছিল, ঠিক তখনই ২.৬ কিমি (১.৬ মাইল)-এর বেশি দীর্ঘ সেতুটিতে ধাক্কা দেয় কনটেইনারবোঝাই ওই জাহাজ। কর্মকর্তারা বলেছেন, জাহাজটিতে বৈদ্যুতিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল এবং দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই জাহাজ থেকে বিপৎকালীন ফোন করা হয়েছিল।

বাল্টিমোর ফায়ার চিফ জেমস ওয়ালেস নিশ্চিত করে বলেছেন, দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে… খুবই গুরুতর অবস্থায় আছেন তিনি। জোয়ার-ভাটা উদ্ধার অভিযানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলের জন্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ ছিল ঠাণ্ড আবহাওয়া।

বাল্টিমোরের মেয়র ব্র্যান্ডন স্কট ঘটনাটিকে ‘অকল্পনীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে পানির মধ্যে পড়ে গেছেন, আমাদের এখন সেদিকে মন দিতে হবে, তাদের উদ্ধার করতে হবে। আমরা এখন এ বিষয়টি নিয়েই শুধু কথা বলব।’

শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সময় রাত প্রায় দেড়টায় একটি জাহাজ ৪৭ বছরের পুরনো সেতুরটির কলামে আঘাত করলে এটি ভেঙে পড়ে। তখন বেশ কয়েকটি যানবাহন পানিতে ডুবে যায়। সামুদ্রিক রাডারের তথ্য অনুসারে জাহাজটি রাত ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পোর্ট ব্রিজের টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ডালি নামের ওই কনটেইনার জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো যাচ্ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল সরকারি সংস্থা বলেছে, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার সময় ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। জাহাজের ক্রু এরপর সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে মেরিল্যান্ড পরিবহন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিল। মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেছেন, ‘ক্রুরা বিদ্যুৎ সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর একটি কলামে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটি থেমে যায়।’

শিপিং কম্পানি সিনার্জি মেরিন গ্রুপ বিবিসিকে বলেছে, জাহাজটিতে ভারতীয় ক্রুসহ মোট ২২ জন লোক ছিল। কম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সব ক্রু সদস্য সুস্থ আছেন এবং এ ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার সঠিক কারণ এখনো বের করা হয়নি এবং জাহাজের মালিক মার্কিন ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।’

এদিকে অনুসন্ধান ও উদ্ধারপ্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাল্টিমোরে যাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার দলকে নির্দেশ দিয়েছি, দ্রুত বন্দরটি পুনরায় চালু এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেতুটি পুনর্র্নিমাণ করতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা এবং ফেডারেল সরকার সেতুটির পুনর্র্নিমাণের পুরো ব্যয় বহন করবে। তবে অবশ্যই কংগ্রেস সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

বাল্টিমোরে বিধ্বস্ত সেতু থেকে পড়া ছয় শ্রমিকের মৃত্যুর আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ১২:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে জাহাজের ধাক্কায় ল্যান্ডমার্ক ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুধসের ঘটনায় নিখোঁজ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত ছয়জনই শ্রমিক ছিলেন। ঘটনার সময় সেতুর ওপরের একটি অংশ মেরামতের কাজ করছিলেন তারা।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে একটি জাহাজ সেতুর একটি পিলারে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, তারা তল্লাশি অভিযান শেষ করেছে।

ভেঙে পড়ার সময় বেশ কয়েকটি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করছিল। সেতুটি ২ দশমিক ৬ কিমি (১ দশমিক ৬ মাইল) দীর্ঘ। কনটেইনার জাহাজটি এর একটি পিলারে ধাক্কা মারলে এটি ভেঙে পড়ে।

ঘটনার ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করেছে মার্কিন কোস্ট গার্ড এবং পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

নিখোঁজদের সন্ধানে বিশাল অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর নৌকা এবং হেলিকপ্টার অংশ নেয়। এ ঘটনায় আরো দুজনকে পানি থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। ইউএস কোস্ট গার্ডের সদস্য রিয়ার অ্যাডমিরাল শ্যানন গিলরথ বলেছেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিরা পানির নিচে কতক্ষণ ছিলেন এবং সেখানে পানির তাপমাত্রা কত ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে তাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।’ হিমশীতল পানি ও বহু সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের বেঁচে থাকার কোনো আশা করছে না কর্তৃপক্ষ।

দেশটির কোস্ট গার্ড বলেছে, তারা অনুসন্ধান স্থগিত করেছে।

বেশ কয়েকটি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করছিল, ঠিক তখনই ২.৬ কিমি (১.৬ মাইল)-এর বেশি দীর্ঘ সেতুটিতে ধাক্কা দেয় কনটেইনারবোঝাই ওই জাহাজ। কর্মকর্তারা বলেছেন, জাহাজটিতে বৈদ্যুতিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল এবং দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই জাহাজ থেকে বিপৎকালীন ফোন করা হয়েছিল।

বাল্টিমোর ফায়ার চিফ জেমস ওয়ালেস নিশ্চিত করে বলেছেন, দুইজনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে… খুবই গুরুতর অবস্থায় আছেন তিনি। জোয়ার-ভাটা উদ্ধার অভিযানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলের জন্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ ছিল ঠাণ্ড আবহাওয়া।

বাল্টিমোরের মেয়র ব্র্যান্ডন স্কট ঘটনাটিকে ‘অকল্পনীয় ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে পানির মধ্যে পড়ে গেছেন, আমাদের এখন সেদিকে মন দিতে হবে, তাদের উদ্ধার করতে হবে। আমরা এখন এ বিষয়টি নিয়েই শুধু কথা বলব।’

শহরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সময় রাত প্রায় দেড়টায় একটি জাহাজ ৪৭ বছরের পুরনো সেতুরটির কলামে আঘাত করলে এটি ভেঙে পড়ে। তখন বেশ কয়েকটি যানবাহন পানিতে ডুবে যায়। সামুদ্রিক রাডারের তথ্য অনুসারে জাহাজটি রাত ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পোর্ট ব্রিজের টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ডালি নামের ওই কনটেইনার জাহাজটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো যাচ্ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল সরকারি সংস্থা বলেছে, জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার সময় ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। জাহাজের ক্রু এরপর সম্ভাব্য সংঘর্ষের বিষয়ে মেরিল্যান্ড পরিবহন কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছিল। মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেছেন, ‘ক্রুরা বিদ্যুৎ সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর একটি কলামে ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাজটি থেমে যায়।’

শিপিং কম্পানি সিনার্জি মেরিন গ্রুপ বিবিসিকে বলেছে, জাহাজটিতে ভারতীয় ক্রুসহ মোট ২২ জন লোক ছিল। কম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সব ক্রু সদস্য সুস্থ আছেন এবং এ ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার সঠিক কারণ এখনো বের করা হয়নি এবং জাহাজের মালিক মার্কিন ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।’

এদিকে অনুসন্ধান ও উদ্ধারপ্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাল্টিমোরে যাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার দলকে নির্দেশ দিয়েছি, দ্রুত বন্দরটি পুনরায় চালু এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেতুটি পুনর্র্নিমাণ করতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি একটি দুর্ঘটনা এবং ফেডারেল সরকার সেতুটির পুনর্র্নিমাণের পুরো ব্যয় বহন করবে। তবে অবশ্যই কংগ্রেস সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।