নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজার অস্বস্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই। নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে দীর্ঘদিন ধরেই হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন সময় নানা পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজার দীর্ঘদিন ধরে চড়া, যা এখন লাগামছাড়া। এরই মাঝে নতুন করে বেড়েছে দাম ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, পাকা টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৫০-৬০ টাকা, স্থানভেদে বেশিও বিক্রি হচ্ছে। লাউ-কুমড়ার দামও চড়া। আলু ৫০-৬০ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, মূলা ৭০-৮০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা কাটা টুকরো বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৮০-৯০ টাকা, ঝিঙা ৮০-১০০, উস্তা ১০০ ও কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, প্রতি পিস জালি ৪০-৫০ টাকা ও লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থানভেদে লাল শাকের আঁটি ৩০-৪০ টাকা, লাউ শাক ৬০ টাকা, মুলা শাক ২৫ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা আঁটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
চাষের শিং মাছের কেজি (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৪৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ২০০ টাকা, কাচকি মাছ ৬০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাইম মাছ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, সোল মাছ ৭০০ টাকা ও আইড় মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিছু স্থানে ৭০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্থানভেদে কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
মোটা জাতের বিআর ২৮ চালের দাম দেড় থেকে দুই টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে স্বর্ণা পাইজাম চালের দামও বেড়েছে। এখন বিআর ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা, যা ৫২-৫৩ টাকা ছিল। তবে সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল আগের মতো যথাক্রমে ৬৮-৭২ টাকা এবং ৭২-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, চলতি সপ্তাহে আরেকদফা বেড়েছে সরকারের বেধে দেওয়া পণ্য পেঁয়াজ ও আলুর দাম। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি বাছাই করা পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১১০ টাকা পর্যন্ত। যা গত সপ্তাহের থেকে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি। অন্যদিকে, আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ একইভাবে বেড়ে ৮৫-৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকারের বেঁধে দেওয়া পেঁয়াজের দর প্রতি কেজি ৬৫ টাকা।
আবার বাজারে আলুর দাম ঠেকেছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেশি। আর সরকার নির্ধারিত আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৬ টাকা।
শান্তিনগর বাজারে ক্রেতা হাসানুজ্জামান বলেন, দেড় দুই হাজার টাকায়ও এক সপ্তাহের বাজার করা যাচ্ছে না। এটা কি ধরনের অবস্থা। সব পণ্যের দাম যেন প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে, শুধু বাড়ছে না ইনকাম। তাহলে সংসার চলবে কীভাবে?
তিনি বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিয়েও সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। উল্টো ওইসব পণ্যের দাম আরো দ্রুত বাড়ছে। তাহলে কি সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে?
এদিকে খুচরাপর্যায়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু। পরিশোধিত খোলা চিনি কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রির কথা থাকলেও কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজার ঘুরে আরও দেখা গেছে, সরকারি নির্ধারণকৃত দামের থেকেও কেজি প্রতি ২৬ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
বাজারে সব কিছুর লাগামহীন দামের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের অনেকেই বাজারের এই অবস্থার জন্য সরকারকে দুষছেন।
বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কবির আহমেদ বলেন, কি বলব, আমাদের কিছুই বলার নেই। আমাদের মরা ছাড়া উপায় নেই। সরকার কি দাম বেঁধে দিল আর দিল না সে অপেক্ষায় কি ব্যবসায়ীরা থাকেন? দাম বাড়ালে এরা মুহূর্তেই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন, কিন্তু দাম কমালে এরা কমায় না। সরকার যেন কিছুই করতে পারছে না। কিছুতেই যেন সিন্ডিকেটের ভূত পিছু ছাড়ছে না। সবকিছুতেই শুনি সিন্ডিকেট।
সাজেদা বেগম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখন আর লিস্ট নিয়ে বাজারে আসি না। সারা মাসের কিছুই কিনে রাখি না। সবকিছুর যে দাম তাতে খাওয়া বন্ধ করতে পারলেই বাঁচতাম। সেটিও পারছি না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই সরকার একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করুক। যেভাবে বিচ্ছিন্ন মনিটরিং এবং অভিযান পরিচালনা করেন এতে কিছুই হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের হোতাদের ধরতে হবে। তাহলেই সাধারণ মানুষ খেয়ে বাঁচতে পারবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোনো কিছুই কম দামে কিনতে পারছেন না। সব কিছুই আড়ত থেকে উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বিক্রি করতে গেলে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়ত থেকে দাম না কমালে ভোক্তাপর্যায়ে দাম কমানো সম্ভব না।