নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বাইরে থেকে শত্রু আসতে হয় না। দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন অনেক শত্রু বাংলাদেশেই আছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১৫তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি ভবনসহ পাঁচটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, সুর্নিদিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পেরেছি বলেই বাংলাদেশ আজ অনেকটাই বদলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। এই জিয়া ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। তালা দিয়ে রেখেছিল।
২৯ বছর দেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর ছিল না দাবি করে শেখ হাসিনা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল জিয়াউর রহমান। আমার ছোট বোনের পাসপোর্টটাও রিনিউ করতে দেয়নি সে। আমরা ১৯৮০ সালে লন্ডনে জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি ঢাকা আসতে চেয়েছিল, জিয়াউর রহমান ভিসাও দেয়নি।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তির পাওয়ার পথ। সবই হারিয়েছে। তখন ক্ষমতা দখল শুরু হয় হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে। একের পর এক, সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে এই ধরনের শাসন চলতে থাকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৮১ সালে আমি শুধু দেশে ফিরে আসি একটি লক্ষ্য সামনে রেখে, সেটি হলো এ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করা। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। মৃত্যুকে সামনে থেকেও দেখেছি। কিন্তু ভয় পাইনি। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বাবাকে দেখেছি। তার সঙ্গে দেখা হতো আমার কারাগারে। কলেজে থাকতেও বাবাকে কারাগারে গিয়ে দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও তাকে কারাগারে গিয়ে দেখতাম। এক টানা দুই বছর তিনি কখনও কারাগারের বাহিরে ছিলেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, ছয় বছর পর আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমি ছোট বোনের সঙ্গে আলোচনা করে দেশে ফিরে আসা সিদ্ধান্ত নেই। আমার মেয়ে তখন বয়স ৮ বছর, ছেলের বয়স ১০ বছর। আমি এমন একটা দেশে আসছি যেখানে আমার মা-বাবার হত্যার বিচার হয়নি। ইনডেমনিটি অর্ডিনেস জারি করে তাদের বিচার হাত থেকে রক্ষা করে, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল।
আমাদের সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে। মানুষ ভোট দিলে আবার সরকারে আসব, নইলে নয় বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে যে পর্যন্ত এগিয়ে এনেছে, তার ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে।
রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে। রিজার্ভ নিয়ে এতো চিন্তার কিছু নেই বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে ততক্ষণ ভাবি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও জাতির পিতার হত্যাকারীসহ অনেক চক্রান্তকারী আছে, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, সব বাধা অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কারণেই দেশকে বদলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
দেশে মেগা প্রজেক্টের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকার কাজ করছে বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, সরকারের উন্নয়নের উপকারভোগী ১০ কোটি মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিটা উন্নয়ন যেন টেকসই হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশনের পরেও এখনো অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে রয়েছি। বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। একসময় অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশে কোনো উন্নয়ন সম্ভব না। শুনে কষ্ট হতো। কিন্তু পরে জিদ চেপেগেছিল।মনে মনে ঠিক করেছিলাম যে বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে (অংশীদারত্ব) এগিয়ে আসতে পারে। এখন কিন্তু বিদেশিরা সবাই জিজ্ঞাসা করেন যে ম্যাজিকটা কোথায়? তখন বলি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোলেই জাতিকে উন্নত করা যায়।
বিসিএস কর্মকতাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আপনাদের প্রশিক্ষণকে দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করতে হবে। আপনাদের অবশ্যই দেশপ্রেমিক হতে হবে। কারণ আমরা যে টাকায় চলি, সেটা কৃষকদের পরিশ্রমের কারণেই আসে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারা আমাদের জন্য পরিশ্রম করে। সুতরাং তাদের সেই পরিশ্রমকে মাথায় রাখতে হবে। আজকে আমার একটাই কথা থাকবে, আপনাদের দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
বক্তব্যের শেষে ‘আমাদের একেকজন অফিসার একেকজন রত্ন হিসেবে গড়ে উঠবেন’ এই আশাবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা চাই, দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আজকে পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন যতটুকু করেছি, সেটা যেন অব্যাহত থাকে।