রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ভারতকে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, তবে ন্যায্য পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাইলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে আমাদের নাগরিককে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেঁচে দিছে কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টা নদী আছে, প্রত্যেকটা নদীতেই তারা বাধ বসিয়ে রেখেছে। একদিকে ভারত আমাদেরকে পানি দেয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশের শত্রু হাসিনাকে তারা বসিয়ে রেখেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের ডাক। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। ৩৬ দিনের সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) ওই ভারতে পালিয়েছেন। একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের যে শত্রু তাকে (হাসিনা) দিল্লিতে রাজার হালতে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তিনি আবার আওয়ামী লীগারদের বিভিন্ন হুকুম রাজি করেন।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকের এই সংগ্রাম আমাদের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। তিস্তাপাড়ের মানুষের এই সংগ্রামকে আবার কখনো বন্ধ হতে দেবো না। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই তিস্তা নিয়ে আপনাদের মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আর আপনারা যেহেতু অন্তর্র্বতীকালীন সরকার সেহেতু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন।
ভারতের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যদি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব যুক্ত করতে চান তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। আর আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে বন্ধুত্বের সঙ্গে দেখতে চাই। যে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের যে আন্দোলন শুরু হচ্ছে এটা কি আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব। মাওলানা ভাসানী যেমন তিস্তার রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছে, বহুদিন পর আজ আসাদুল হাবিব দুলুভাই সেই আন্দোলন আবার শুরু করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ সরকার বলে, তাই ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য পানি তাদের চাইতে হবে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন। জনগণ অনেক বছর ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ চায় ভোট দিয়ে নিজের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে, তাদের দ্বারা তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাতে। অনেকে বলে, আমরা নাকি ভোট ভোট করি, ভোট হলে দেশে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা বন্ধ হবে। জনগণ প্রতিনিধি পাবে তাদের কথা বলার।
উপস্থিত মানুষকে উদ্দেশ্যে করে মির্জা ফখরুল বলেন, লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না, লড়াই করে আমাদের গুলো অধিকার আদায় করবো, ন্যায্য পাওনা বুঝে নেবো।
তিনি বলেন, এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে, সেটা হলো, বাঁচা মরার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।
আন্দোলন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এর মধ্যে রংপুরের কাউনিয়া রেলসেতু ও গঙ্গাচড়া মহিপুর বাজার সংলগ্ন তিস্তা নদীর বুকে রংপুরের কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহতি জানাতে তিস্তাপাড়ে এসেছেন।
সমাবেশের বিভিন্ন স্পটগুলোতে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্নয়ক জোনায়েদ সাকি।