Dhaka সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে অবগত ছিল ভারত : জয়শঙ্কর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের আগে থেকেই সেখানে তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা অসন্তোষ সম্পর্কে ভারত জানত বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

শনিবার (২২ মার্চ) দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদের পরামর্শক কমিটির কাছে জয়শঙ্কর এ তথ্য জানান বলে জানিয়েছেন।

জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনার ওপর ভারতের তেমন কোনো প্রভাব ছিল না, তাই তারা শুধু পরামর্শ দিতে পারত, কিন্তু সরাসরি কিছু করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শুধু ভারত নয়, আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পক্ষও বাংলাদেশের অস্থিরতা সম্পর্কে অবগত ছিল।

এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়টি টেনে আনেন। যেখানে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করা হতে পারে-এমন সতর্কবার্তা জাতিসংঘ আগে থেকেই দিয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক কমিটি জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ‘খোলামেলা’ আলোচনা করতে বৈঠকে বসেছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এতে প্রাধান্য পায়।

এ ছাড়া তারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও এ নিয়ে ভারতের প্রস্তুতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার জোট সার্কের ‘পুনর্জাগরন’ নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এতে তিনি এই জোটটির কার্যক্রম আবারও শুরু করার ইঙ্গিত দেন। যদিও ২০১৬ সাল থেকে সার্ক অকার্যকর হয়ে আছে।

ব্রিফিংয়ে জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, ‘সার্ক বাতিল হয়নি, বরং বিরতিতে আছে।’ অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এটির পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারতীয় এমপিরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানতে চান, আগামী এক দশকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত কী পদক্ষেপ নেবে।

এস জয়শঙ্কর আলোচনায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ‘বহিরাগত শক্তির’ ভূমিকা রয়েছে এবং চীনকে তিনি ‘প্রতিপক্ষ’ নয়, বরং ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে দেখেন।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত তার পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। তবে আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে আসন্ন বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কিছু জানা যায়নি।

অধ্যাপক ইউনূস এরই মধ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি যা চট্টগ্রাম ও ঢাকা এবং চীনা গন্তব্যগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। এদিকে এস. জয়শঙ্কর চীনকে নিজেদের ‘প্রতিপক্ষ নয় বরং প্রতিযোগী’ বলে উল্লেখ করেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ত্রিশাল জিরো পয়েন্ট-হরিরামপুর সড়কটি যেন মরণফাঁদ

বাংলাদেশে শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে অবগত ছিল ভারত : জয়শঙ্কর

প্রকাশের সময় : ০২:০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের আগে থেকেই সেখানে তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা অসন্তোষ সম্পর্কে ভারত জানত বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।

শনিবার (২২ মার্চ) দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদের পরামর্শক কমিটির কাছে জয়শঙ্কর এ তথ্য জানান বলে জানিয়েছেন।

জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনার ওপর ভারতের তেমন কোনো প্রভাব ছিল না, তাই তারা শুধু পরামর্শ দিতে পারত, কিন্তু সরাসরি কিছু করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শুধু ভারত নয়, আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পক্ষও বাংলাদেশের অস্থিরতা সম্পর্কে অবগত ছিল।

এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়টি টেনে আনেন। যেখানে বলা হয়েছিল, শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করা হতে পারে-এমন সতর্কবার্তা জাতিসংঘ আগে থেকেই দিয়েছিল।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শক কমিটি জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ‘খোলামেলা’ আলোচনা করতে বৈঠকে বসেছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এতে প্রাধান্য পায়।

এ ছাড়া তারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও এ নিয়ে ভারতের প্রস্তুতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার জোট সার্কের ‘পুনর্জাগরন’ নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এতে তিনি এই জোটটির কার্যক্রম আবারও শুরু করার ইঙ্গিত দেন। যদিও ২০১৬ সাল থেকে সার্ক অকার্যকর হয়ে আছে।

ব্রিফিংয়ে জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, ‘সার্ক বাতিল হয়নি, বরং বিরতিতে আছে।’ অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এটির পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভারতীয় এমপিরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানতে চান, আগামী এক দশকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত কী পদক্ষেপ নেবে।

এস জয়শঙ্কর আলোচনায় উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ‘বহিরাগত শক্তির’ ভূমিকা রয়েছে এবং চীনকে তিনি ‘প্রতিপক্ষ’ নয়, বরং ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে দেখেন।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে সংলাপ শুরু করলেও, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় ভারত দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারত তার পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। তবে আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে আসন্ন বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কিছু জানা যায়নি।

অধ্যাপক ইউনূস এরই মধ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তি যা চট্টগ্রাম ও ঢাকা এবং চীনা গন্তব্যগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। এদিকে এস. জয়শঙ্কর চীনকে নিজেদের ‘প্রতিপক্ষ নয় বরং প্রতিযোগী’ বলে উল্লেখ করেছেন।