নিজস্ব প্রতিবেদক :
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পূর্ভাবাস বলছে, ২০২৪ সালেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে ২০২৮ সালে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এর আগে এপ্রিলে দেওয়া পূর্বাভাসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল সংস্থাটি, সেখান থেকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে নিজেদের পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুকে বাংলাদেশের জন্য চলতি ২০২৩ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ছয় শতাংশের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। তবে এপ্রিলের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে তা ৬ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে ইমার্জিং অ্যান্ড ডেভেলপিং এশিয়া ক্যাটাগরিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে চলতি বছর ও সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার সূচক বেশ শক্তিশালী। এই ক্যাটাগরিতে আইএমএফের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের জন্য গড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া ২০২৪ সালের জন্য ৪ দশমিক ৮ শতাংশ ও ২০২৮ সালের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
আইএমএফের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর ও আগামী বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের দিক থেকে ইমার্জিং অ্যান্ড ডেভেলপিং এশিয়া ক্যাটাগরিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে শুধুমাত্র ভারত। তবে ২০২৮ সালের পূর্বাভাসে আবার ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৮ সালে ভারতের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ৭ শতাংশ।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো তুলনামূলক শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর থেকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে আইএমএফ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাসেরও পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০২৩ সালে ৩ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে যা আরও কমে ঠেকতে পারে ২ দশমিক ৯ শতাংশে।
আইএমএফের পাশাপাশি গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। অবশ্য চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ উল্লেখ করে আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে। পাশাপাশি ২০২৮ সালে তা ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসারও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, নিউ ফ্রন্টিয়ার্স ইন পভার্টি রিডাকশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র অনিশ্চয়তাকে অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে। একইসঙ্গে বাহ্যিক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের বিচ্যূতি সংশোধন এবং বিনিময় হারে সীমা প্রত্যাহারের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানি বাজার বিঘ্নিত হয়েছে; সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার অভূতপূর্ব হারে বাড়ানো হয়েছে। এসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। প্রবৃদ্ধি যে সবখানে একই হারে হচ্ছে তা নয়; সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতানৈক্য বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের পূর্বাভাস হলো চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে নেমে আসবে। আগের বছরে যা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে তা ২ দশমিক ৯ শতাংশে নামতে পারে। এটা ঐতিহাসিক গড় মানের চেয়ে কম। তবে চলতি বছর সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আগের বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ। সেই সঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য ব্যতীত মূল্যস্ফীতির যে হিসাব, সেই মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসবে।