নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশর গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে বর্তমান অবৈধ সরকার। যারা জনগণের ভোট ছাড়া জোর করে ক্ষমতায় আছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিরোধী দলগুলো দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম করছি। যুগপৎভাবে ৬৩টি দল আন্দোলন করছি।
মঙ্গলবার(১৪ মে) গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনেরে সঙ্গী গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সার্বিক বিষয় নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ হয়েছে। চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা প্রাথমিক আলোচনা করেছি।
গত ৭ জানুয়ারি একটি ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আবার অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় আছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, যেকোনো পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তরুণ-যুবকরা। সে ক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদের সবাই তরুণ। সবাই ছাত্র নেতা থেকে উঠে এসেছে। আশা করি আগামীতে তাদের ভূমিকা অক্ষুণ্ন রাখবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কারও উপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে এটা আমরা মনে করি না। দেশের জনগণ সব নিজের শক্তির ওপর ভর করেই ৭১ সালের পূর্বেও আন্দোলন করেছে, ৭০ আন্দোলন করেছে, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। পরবর্তীতে আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা সম্পূর্ণ জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করেই করছি। সুতরাং এই বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কারো উপর নির্ভর করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে আনবে, তা আমরা মনে করি না। আমরা বরাবর একই কথা বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কারো উপর নির্ভর করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে আনবে, এটা আমরা মনে করি না। বাংলাদেশের জনগণ সব সময় নিজের শক্তিতে এবং নিজের পায়ের উপর ভর করে ৭০ সালের পূর্বে আন্দোলন করেছে, ৭০ সালে আন্দোলন করেছে, ৭১ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং পরবর্তীকালে আমরা যে আন্দোলন করছি, তা সম্পূর্ণ জনগণের শক্তিতের ওপর নির্ভর করেই আন্দোলন করছি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য। সুতরাং এবিষয়ে আমরা খুব বেশি একটা কথা বলতে চাই না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, একেবারে ভয়াবহ পর্যায়ে। খাদের কিনারায় গিছে। পড়ে যাবে।
বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় এবং কীভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার বিশ্লেষণ- সেই সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণে আমরা প্রাথমিক কিছু আলোচনা আজকে করেছি। একটি কথা আমরা এখানে সবাই একমত হয়েছি। যেটা হলো, যেকোন পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তরুণ, যুবক এবং ছাত্র সমাজ। সেক্ষেত্রে আমি খুব আশাবাদী, গণঅধিকার পরিষদে সবাই তরুণ এবং ছাত্র সমাজ থেকে উঠে এসেছেন। ছাত্র নেতা ছিলেন। আর এই আন্দোলনে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত জোরালো ছিলো।
ফখরুল বলেন, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা যে দফাগুলো তুলে ধরেছিলাম। বিশেষ করে ৩১ দফা। আর আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমরা একদফার কথা বলেছিলাম। মূল কথা ছিলো, নিরপেক্ষ এবং অবাধ একটি নির্বাচন, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন করা। সেই লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আলোচনা করছি এবং আন্দোলন করছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান যে অবৈধ সরকার, যারা বিনা ম্যান্ডেটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা (বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো) দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম ও লড়াই করছি। এজন্য আমরা প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করে আসছি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অতীতে আমাদের আন্দোলনের বিষয়বস্ত নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে জনগণের যে সমর্থন ছিলো এবং তাদের রাজপথে উপস্থিত ছিলো, সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার যেভাবে দমন-পীড়ন করেছে এবং আইন-আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধীদল নির্মূল করে একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য সরকারের যে অপ্রচেষ্টা, সেটা নিয়ে আমরা সবাই সতর্ক আছি। আর এই স্বৈরশাসনের অবসান না ঘটিয়ে এবং আগামীর নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা না পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন চলবে।
নুর ছাড়াও বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, এ্যাডভোকেট নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান খান, মো. রবিউল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, মানবাধিকার সম্পাদক এ্যাডভোকেট খালিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন।
পরে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. সামছুল আলম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।