Dhaka শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় : অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ। একই সঙ্গে আইএমএফ-এর সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমি বলবো—অনেকের ধারণা যে আমরা শুধু অর্থ আনতে গেছি। আসলে সেটা কিন্তু না। ডেফিনিটলি আইএমএফের সঙ্গে আমাদের যে নেগোসিয়েশনটা (সমঝোতা) চলছিল দুইটা টার্মস নিয়ে, সেটা কন্টিনিউ করার জন্য…। এছাড়া বিশ্বব্যাংক আছে তাদের সঙ্গে ইসে (আলোচনা) করার জন্য গিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এবারের সফর সফল হয়েছে। কারণ আমিতো বিশ্বব্যাংক, এআইবি, আইওএম, আইএমএফ, আইএফসি, ওপেক ফান্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, সেদেশের সরকারের এনার্জি বিভাগ, স্টেট বিভাগ, লেবার, কৃষি খাত এবং ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই কিন্তু আমাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন এবং আমন্ত্রণ দিয়েছেন। তারা পূর্ণ প্রিপারেশন নিয়ে এসেছেন। ’

তিনি বলেন, এ বছর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পিছনে না ঘুরে বরং তারা ইউএস প্রেসিডেন্ট ও অফিসের লোকজনের কাছে যাচ্ছে। তারা সবাই এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

অর্থের সংস্থানের জন্য আমরা তিনটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বে-টার্মিনাল, ২০০ মিলিয়ন ডলার সেফটিনেট ও রিজিলিয়ান প্রকল্পে ওপেন ফান্ডের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। আর আইএফসি-এর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারাও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে।

আইএমএফ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ-এর দুই একটা ইস্যু আছে, যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে, যেগুলোর সবগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সে সব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আরগুমেন্ট করেছি। তারা বলেছে, এ করো সেই করো আমরা সে পথে হাঁটবো না। বাংলাদেশের মোটামুটি মেক্রোইকোনিক অনেক ভালো। ডিসেম্বর থেকে এখন অনেক ভালো। দ্রুত রিফর্ম করেছে যেটা ভালো হয়েছে। আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়ে যদি ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাই নি। তাদের বলেছি তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা মেক্রোইকোনোমিকে স্থিতিশীল আনতে পেরেছি। এজন্য এখন তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে সেটা বুঝতে পেরেছে। তারা বলেছি আমরা কন্টিনিউ করছি।

এছাড়া প্রজেক্ট সাপোর্ট অনেকগুলো আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইবি থেকে ১ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সার্পোটের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাজেট সাপোর্টের বিষয়ে একটু আলোচনা চলছে। আইএমএফ এর অনেক শর্ত থাকে তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করবো।

আইএমএফের কি শর্ত আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের শর্তের মধ্যে আমরা বলেছি এনবিআর সেপারেশন করবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটটাকে বলেছে সহজ করতে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করবো না। আমাদের স্টেবিলাইজেশন ফান্ডে তারা ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার জন্য বলেছি। ওরা বলেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে বলেছে। তবুও আমরা বলেছি চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত দেবো। সব মিলিয়ে কিন্তু দুঃখ করার কোনো কারণ নেই।

আইএমএফ যদি কোনো কারণ ঋণ দেওয়া চালিয়ে না যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য জায়গা থেকে তা পেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আইএমএফের একটা বিষয় হলো বাজেট সাপোর্ট,  সেটা আবার পাঁচ বছরের মধ্যে দিতে হয়। আর আইএমএফ টাকা দিলেই যে নেবো এমন নাতো। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমরা যদি ঋণ নিতে থাকি। আর এক্সচেঞ্জ রেট যদি কমে যায়। তাহলে তো ৩ বিলিয়ন দেওয়ার কথা থাকলে ৫ বিলিয়ন শোধ করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। ’

আইএমএফ কি টাকা দিচ্ছে না, তারা কি তাহলে তাদের প্রোগ্রাম রাখছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের টাকাই কি টাকা, আমরা তো শক্ত সিদ্ধান্ত নেবো, প্রোগ্রামে থাকবো কি না। এ সিদ্ধান্ত আমরা নেবো। ওদের চাকরি-বাকরি আছে তো…। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে ওদের কয়েকজনের চাকরি চলে গেছে। আমরা না নিলে দেখবেন সেখানে কয়জনের চাকরি যায়৷ সার্বিকভাবে এখন আর আমরা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নির্ভরশীল না। সেই দিন চলে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ঋণটা তারা বলেছে কন্টিনিউ করবে। ’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় : অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ। একই সঙ্গে আইএমএফ-এর সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমি বলবো—অনেকের ধারণা যে আমরা শুধু অর্থ আনতে গেছি। আসলে সেটা কিন্তু না। ডেফিনিটলি আইএমএফের সঙ্গে আমাদের যে নেগোসিয়েশনটা (সমঝোতা) চলছিল দুইটা টার্মস নিয়ে, সেটা কন্টিনিউ করার জন্য…। এছাড়া বিশ্বব্যাংক আছে তাদের সঙ্গে ইসে (আলোচনা) করার জন্য গিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এবারের সফর সফল হয়েছে। কারণ আমিতো বিশ্বব্যাংক, এআইবি, আইওএম, আইএমএফ, আইএফসি, ওপেক ফান্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, সেদেশের সরকারের এনার্জি বিভাগ, স্টেট বিভাগ, লেবার, কৃষি খাত এবং ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই কিন্তু আমাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন এবং আমন্ত্রণ দিয়েছেন। তারা পূর্ণ প্রিপারেশন নিয়ে এসেছেন। ’

তিনি বলেন, এ বছর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পিছনে না ঘুরে বরং তারা ইউএস প্রেসিডেন্ট ও অফিসের লোকজনের কাছে যাচ্ছে। তারা সবাই এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

অর্থের সংস্থানের জন্য আমরা তিনটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বে-টার্মিনাল, ২০০ মিলিয়ন ডলার সেফটিনেট ও রিজিলিয়ান প্রকল্পে ওপেন ফান্ডের সঙ্গে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। আর আইএফসি-এর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারাও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে।

আইএমএফ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ-এর দুই একটা ইস্যু আছে, যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে, যেগুলোর সবগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সে সব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আরগুমেন্ট করেছি। তারা বলেছে, এ করো সেই করো আমরা সে পথে হাঁটবো না। বাংলাদেশের মোটামুটি মেক্রোইকোনিক অনেক ভালো। ডিসেম্বর থেকে এখন অনেক ভালো। দ্রুত রিফর্ম করেছে যেটা ভালো হয়েছে। আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়ে যদি ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাই নি। তাদের বলেছি তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা মেক্রোইকোনোমিকে স্থিতিশীল আনতে পেরেছি। এজন্য এখন তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে সেটা বুঝতে পেরেছে। তারা বলেছি আমরা কন্টিনিউ করছি।

এছাড়া প্রজেক্ট সাপোর্ট অনেকগুলো আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইবি থেকে ১ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সার্পোটের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাজেট সাপোর্টের বিষয়ে একটু আলোচনা চলছে। আইএমএফ এর অনেক শর্ত থাকে তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করবো।

আইএমএফের কি শর্ত আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের শর্তের মধ্যে আমরা বলেছি এনবিআর সেপারেশন করবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটটাকে বলেছে সহজ করতে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করবো না। আমাদের স্টেবিলাইজেশন ফান্ডে তারা ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার জন্য বলেছি। ওরা বলেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে বলেছে। তবুও আমরা বলেছি চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত দেবো। সব মিলিয়ে কিন্তু দুঃখ করার কোনো কারণ নেই।

আইএমএফ যদি কোনো কারণ ঋণ দেওয়া চালিয়ে না যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য জায়গা থেকে তা পেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আইএমএফের একটা বিষয় হলো বাজেট সাপোর্ট,  সেটা আবার পাঁচ বছরের মধ্যে দিতে হয়। আর আইএমএফ টাকা দিলেই যে নেবো এমন নাতো। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমরা যদি ঋণ নিতে থাকি। আর এক্সচেঞ্জ রেট যদি কমে যায়। তাহলে তো ৩ বিলিয়ন দেওয়ার কথা থাকলে ৫ বিলিয়ন শোধ করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। ’

আইএমএফ কি টাকা দিচ্ছে না, তারা কি তাহলে তাদের প্রোগ্রাম রাখছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের টাকাই কি টাকা, আমরা তো শক্ত সিদ্ধান্ত নেবো, প্রোগ্রামে থাকবো কি না। এ সিদ্ধান্ত আমরা নেবো। ওদের চাকরি-বাকরি আছে তো…। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে ওদের কয়েকজনের চাকরি চলে গেছে। আমরা না নিলে দেখবেন সেখানে কয়জনের চাকরি যায়৷ সার্বিকভাবে এখন আর আমরা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক নির্ভরশীল না। সেই দিন চলে গেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ঋণটা তারা বলেছে কন্টিনিউ করবে। ’