Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু

বরগুনা জেলা প্রতিনিধি

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই মাঝারি থেকে হালকা বাতাস বইছে। বেশকিছু এলাকায় গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মহাবিপদ সংকেত থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না মানুষ।

রোববার (১৪ মে) ভোর রাত থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও দমকা হাওয়া বইছে। সকাল ৯টা থেকে মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পায়রা নদী ও বিষখালী নদী শান্ত থাকলেও সাগর কিছুটা উত্তল রয়েছে। বরগুনাতেু ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস।

জানা গেছে, এ ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় বরগুনা জেলায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলীতে ১১১টি, তালতলীতে ৫৩টি, পাথরঘাটায় ১২৪টি, বেতাগীতে ১১৪টি এবং বামনায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরগুনার বেতাগী এবং বামনা উপজেলা ছাড়া জেলার বাকি চার উপজেলায় সিপিপির মোট ৮ হাজার ৪৬০ জন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৩০০ জন, জাগনারীর ১৫০ জন, ব্র্যাকের ৩৫৫ জন, রোভার স্কাউটের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক তৎপর রয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে বরগুনা জেলার প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ মেট্রিক টন চাল, ১০০০ কার্টুন শুকনা খাবার, ৭০০ প্যাকেট বিস্কুট এবং ১৯০ বান টিন রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব না থাকায় বরগুনার সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে কেউ যাননি। ফলে বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে সেখানেও নেই কেউ।

বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাইক্লোন শেল্টারের মূল ফটকে এখনো তালা ঝুলছে। একই অবস্থা সোনাখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুরাকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চর কলনি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। অন্যদিকে যেসব সাইক্লোন শেল্টার খোলা আছে সেখানেও নেই কোনো আশ্রয়প্রার্থী।

মধ্য বুড়িরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারের দায়িত্বে থাকা হারুন আর রশিদ বলেন, শনিবার বিকেল থেকে সাইক্লোন শেল্টার খুলে বসে আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আশ্রয় প্রার্থী আসেননি।

বুড়িরচর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিপিপির সদস্য মো. ফেরদৌস বলেন, আমরা জনসাধারণকে মাইকিং করে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে বলেছি। কিন্তু তারা কেউ সাইক্লোন শেল্টারে যাচ্ছেন না। আমাদের ধারণা বৃষ্টি অথবা ঝড় শুরু হলে মানুষজন সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়া শুরু করবে।

বরগুনা বরিয়াল পাড়ার বাসিন্দ শহীদ মিয়া বলেন, এখনো কোনো প্রকার ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়নি। তাই আমরা সাইক্লোন শেল্টারে যাইনি। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে সাইক্লোন শেল্টারে যাবো।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, দূর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাড়ে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারা জেলায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আশা করছি তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এই ঝড় আমরা মোকাবিলা করব। সরাসরি ঘূর্ণিঝড়টি বরগুনার উপকূলে আঘাত না হানলেও তার প্রভাবে যে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাত হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে বরগুনার পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলার সব ইউনিয়ন, বেতাগী উপজেলার এক তৃতীয়াংশ ও সদর উপজেলার বদরখালী, ৭ নম্বর ঢলুয়া, আয়লা পতাকাটা ও ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বরগুনা জেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মারা যান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র তিনটি সামরিক মহড়া হবে

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু

প্রকাশের সময় : ০১:৩২:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০২৩

বরগুনা জেলা প্রতিনিধি

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই মাঝারি থেকে হালকা বাতাস বইছে। বেশকিছু এলাকায় গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মহাবিপদ সংকেত থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না মানুষ।

রোববার (১৪ মে) ভোর রাত থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও দমকা হাওয়া বইছে। সকাল ৯টা থেকে মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পায়রা নদী ও বিষখালী নদী শান্ত থাকলেও সাগর কিছুটা উত্তল রয়েছে। বরগুনাতেু ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস।

জানা গেছে, এ ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় বরগুনা জেলায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলীতে ১১১টি, তালতলীতে ৫৩টি, পাথরঘাটায় ১২৪টি, বেতাগীতে ১১৪টি এবং বামনায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরগুনার বেতাগী এবং বামনা উপজেলা ছাড়া জেলার বাকি চার উপজেলায় সিপিপির মোট ৮ হাজার ৪৬০ জন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৩০০ জন, জাগনারীর ১৫০ জন, ব্র্যাকের ৩৫৫ জন, রোভার স্কাউটের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক তৎপর রয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে বরগুনা জেলার প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ মেট্রিক টন চাল, ১০০০ কার্টুন শুকনা খাবার, ৭০০ প্যাকেট বিস্কুট এবং ১৯০ বান টিন রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব না থাকায় বরগুনার সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে কেউ যাননি। ফলে বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেসব আশ্রয়কেন্দ্র খোলা আছে সেখানেও নেই কেউ।

বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাইক্লোন শেল্টারের মূল ফটকে এখনো তালা ঝুলছে। একই অবস্থা সোনাখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুরাকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চর কলনি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। অন্যদিকে যেসব সাইক্লোন শেল্টার খোলা আছে সেখানেও নেই কোনো আশ্রয়প্রার্থী।

মধ্য বুড়িরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন শেল্টারের দায়িত্বে থাকা হারুন আর রশিদ বলেন, শনিবার বিকেল থেকে সাইক্লোন শেল্টার খুলে বসে আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আশ্রয় প্রার্থী আসেননি।

বুড়িরচর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিপিপির সদস্য মো. ফেরদৌস বলেন, আমরা জনসাধারণকে মাইকিং করে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে বলেছি। কিন্তু তারা কেউ সাইক্লোন শেল্টারে যাচ্ছেন না। আমাদের ধারণা বৃষ্টি অথবা ঝড় শুরু হলে মানুষজন সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়া শুরু করবে।

বরগুনা বরিয়াল পাড়ার বাসিন্দ শহীদ মিয়া বলেন, এখনো কোনো প্রকার ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়নি। তাই আমরা সাইক্লোন শেল্টারে যাইনি। ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে সাইক্লোন শেল্টারে যাবো।

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, দূর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাড়ে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সারা জেলায় কাজ করছে। জেলা প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। আশা করছি তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এই ঝড় আমরা মোকাবিলা করব। সরাসরি ঘূর্ণিঝড়টি বরগুনার উপকূলে আঘাত না হানলেও তার প্রভাবে যে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাত হবে সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে বরগুনার পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলার সব ইউনিয়ন, বেতাগী উপজেলার এক তৃতীয়াংশ ও সদর উপজেলার বদরখালী, ৭ নম্বর ঢলুয়া, আয়লা পতাকাটা ও ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বরগুনা জেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মারা যান।