আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গেল বছর বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী’ ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এবার পাকিস্তানের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দেশটির রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে। এসময় উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিশ্ব রাজনীতির নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটির প্রশাসনের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনা হয় ইরান-পাকিস্তান উত্তেজনা ও পাকিস্তানের আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে।
বেদান্ত প্যাটেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গত সেপ্টেম্বরে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছিল যে, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্নকারী ব্যক্তিরা’ নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধিনিষেধের মুখোমুখি হবে। কিন্তু আপনারা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে একই ঘোষণা দেননি। দুই দেশের মধ্যে একই বিষয়ে ভিন্ন আচরণ কেন?
জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি না যে, কোনো পার্থক্য আছে। আমরা স্রেফ বিষয়টি (পাকিস্তানের ওপর ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ) এখনো পর্যালোচনা করে দেখিনি…।
এই পর্যায়ে প্রশ্নকর্তা আবারও জানতে চান, তো কোনো ব্যক্তি যদি ব্যক্তি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করে বা হস্তক্ষেপ করে, তাহলে আপনারা কী করবেন?
জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, আমি এখানে বিষয়টি পর্যালোচনা করব না। প্রতিটি দেশই আলাদা এবং আমি এখান থেকে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা জানাতে পারব না। তবে আবারও বলতে চাই, আমরা বাংলাদেশ এবং অবশ্যই পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।
বেদান্ত প্যাটেল এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরও বলেন, ‘যখন আমরা দেখব যে, এই অঞ্চলের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের বিবৃত অভিপ্রায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠছে, তখন আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। আমরা আগেও যেমনটা করেছি।’
সাংবাদিক জানতে চান গত কয়েক মাস ধরে আপনাকে এবং ম্যাথিউ মিলারকে বহুবার বলতে শুনেছি যে, আপনারা অবাধ নির্বাচন চান। পাকিস্তানে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন আপনারা। কিন্তু আমি একটি বিষয় শুনিনি। পাকিস্তানে নির্বাচনের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এমনকি বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানে সবচেয়ে সম্মানিত রাজনীতিবিদদের অন্যতম জাভেদ হাশমিকে। আমি বলতে চাই ভুলে গেছেন (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) ইমরান খান ও তার সমর্থকদের।
ইমরানকে দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে পুরোপুরি। তাকে বলা হচ্ছে বিপথগ্রস্ত হিসেবে। তিনি খুব জনপ্রিয়। গত ২৫ বছরে আমি শত শত দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছি। কিন্তু পাকিস্তানে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আপনারা একবারের জন্যও নিন্দা জানাননি। আপনারা শুধু সেখানে একটি অবাধ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানে কি ঘটছে, সেদিকে কি দৃষ্টি দেবেন আপনারা?
এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমাকে কিছু বিষয়ে কথা বলতে হবে। প্রথমত পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন পাকিস্তানি জনগণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আগ্রহ অব্যাহত থাকবে। একটি মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম যে সুস্থ গণতন্ত্রকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান, তা নিয়েও আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি না। এতে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কভারিং করায় সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে সমাবেশ এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা অব্যাহতভাবে উদ্বেগ জানাই। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের স্বঘোষিত লক্ষ্য হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে এমন হলে তা হবে বেমানান।
এ পর্যায়ে তার কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়— শুক্রবার পাকিস্তান সফরে আসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা, খুব শক্তিশালী মিত্রতা আছে, সেসব দেশে তিনি সফরে যান না। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের যে পরিস্থিতি এবং সেখানে যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানকে দেওয়ার মতো কি বার্তা দেবেন আপনারা?
এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, অবশ্যই এ বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ও তাদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যে কোনো দেশের উচিত হবে ইরানকে তার অসৎ কাজ বন্ধ করা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কাজ বন্ধ করতে আহ্বান জানানো। লোহিত সাগরে তাদের কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ এবং বৈধ বাণিজ্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে ইরানকে চাপ দিতে যে কোনো দেশকে আমরা স্বাগত জানাব।
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়— বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব একই রকম ঘটনায় তৃতীয়বার ঘোষণা দিয়েছেন। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ভারতকে আন্তঃজাতীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। আমার মনে হয় না এটা ভারত সরকারের নীতি। এসব আন্তঃদেশীয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কী হচ্ছে অথবা কী চলছে?
বেদান্ত প্যাটেল এ বিষয়ে বলেন, সুনির্দিষ্ট এই রিপোর্ট সম্পর্কে আমি অবহিত নই। এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানার জন্য বলতে পারি।
তার কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়— গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়। যখন পাকিস্তান ইস্যু এসেছে, তখন কেন আপনারা একই ঘোষণা দিচ্ছেন না? কেন দুটি দেশের ক্ষেত্রে এই ভিন্ন আচরণ করা হচ্ছে?
এর আগে সোমবার (২২ জানুয়ারি) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তাসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও অংশীদারি বাড়াবে দেশটি।