Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরে পাঁচ বছরেও ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি, দুর্ভোগে ২০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা চন্দনা-বারাশিয়া নদীতে পাঁচ বছরেও ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদার জেলে থাকায় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার অথবা হেঁটে চলাচল করা গেলেও এখন বর্ষায় ডিঙি নৌকাই একমাত্র ভরসা। অন্যথায় ৮-১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, দুটি উপজেলার যোগাযোগে, জনদুর্ভোগ কমাতে এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারাংকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারাংকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ৬২৫০ মিটার এবং বারাশিয়া নদীর ওপর ৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা।

এসবিসিইএল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মূল ঠিকাদার হলেও কামারগানি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক পর্যায়ে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে বেশ কয়েক লাখ টাকা বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

ঠিকাদার জেলে থাকায় কাজটি শুরুর পরও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে তার হিসাব করে নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এরপর পুনরায় কাজ শুরু হয়। তবে কাজে ধীরগতি চলছে।

বারাংকুলা গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। একপাশে শেখর ইউনিয়ন, যেখানে বড়গাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশে বড়গাঁ নতুন বাজার যেখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। বারাংকুলা, ভাটপাড়া, দিঘিরপাড় রাখালতলী, গঙ্গানন্দপুরসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ এবং অপর পাশে আলফাডাঙ্গার বুড়াইচ ইউনিয়নের ফলিয়া, হিদাডাঙ্গা, শিয়ালদিসহ প্রায় ৮-১০ গ্রামের লোকজন এ পথ দিয়ে চলাচল করে। পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে ব্রিজটির কাজ চলছেই, কবে শেষ হবে তার ঠিক নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার বলেন, বারাশিয়া নদীতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল একটি সেতু নির্মাণের। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের সময়কালে এবং তার প্রচেষ্টায় সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। পাঁচ বছরেও সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মালিক জাহিদ হোসেনের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম বলেন, এ কাজের ঠিকাদার জেলে থাকায় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যে পর্যন্ত কাজ হয় তার হিসাব করে নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে জাহিদ কনস্ট্রাকশন কাজটি পান। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত গতিতে কাজ করছে।

প্রকৌশলী আরও বলেন, এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি দুই মাসের মধ্যে সেতুটির কাজ সম্পন্ন হবে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, জানামতে এ কাজের প্রথম ঠিকাদার বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে জেলখানায় বন্দি। তাই কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। যার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ চলমান আছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুরে পাঁচ বছরেও ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি, দুর্ভোগে ২০ গ্রামের মানুষ

প্রকাশের সময় : ০৫:২২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা চন্দনা-বারাশিয়া নদীতে পাঁচ বছরেও ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদার জেলে থাকায় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার অথবা হেঁটে চলাচল করা গেলেও এখন বর্ষায় ডিঙি নৌকাই একমাত্র ভরসা। অন্যথায় ৮-১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, দুটি উপজেলার যোগাযোগে, জনদুর্ভোগ কমাতে এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারাংকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারাংকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ৬২৫০ মিটার এবং বারাশিয়া নদীর ওপর ৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার টাকা।

এসবিসিইএল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মূল ঠিকাদার হলেও কামারগানি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক পর্যায়ে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করে বেশ কয়েক লাখ টাকা বিল তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

ঠিকাদার জেলে থাকায় কাজটি শুরুর পরও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে তার হিসাব করে নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এরপর পুনরায় কাজ শুরু হয়। তবে কাজে ধীরগতি চলছে।

বারাংকুলা গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। একপাশে শেখর ইউনিয়ন, যেখানে বড়গাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশে বড়গাঁ নতুন বাজার যেখানে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। বারাংকুলা, ভাটপাড়া, দিঘিরপাড় রাখালতলী, গঙ্গানন্দপুরসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ এবং অপর পাশে আলফাডাঙ্গার বুড়াইচ ইউনিয়নের ফলিয়া, হিদাডাঙ্গা, শিয়ালদিসহ প্রায় ৮-১০ গ্রামের লোকজন এ পথ দিয়ে চলাচল করে। পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে ব্রিজটির কাজ চলছেই, কবে শেষ হবে তার ঠিক নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার বলেন, বারাশিয়া নদীতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল একটি সেতু নির্মাণের। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের সময়কালে এবং তার প্রচেষ্টায় সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। পাঁচ বছরেও সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মালিক জাহিদ হোসেনের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাহাত ইসলাম বলেন, এ কাজের ঠিকাদার জেলে থাকায় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে যে পর্যন্ত কাজ হয় তার হিসাব করে নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে জাহিদ কনস্ট্রাকশন কাজটি পান। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত গতিতে কাজ করছে।

প্রকৌশলী আরও বলেন, এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি দুই মাসের মধ্যে সেতুটির কাজ সম্পন্ন হবে।

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, জানামতে এ কাজের প্রথম ঠিকাদার বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়ে জেলখানায় বন্দি। তাই কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। যার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ চলমান আছে।