ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। জেলা শহর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কের ওপর যানবাহনের চাপ বহুগুণ বাড়লেও এটি চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাবনা এখনো পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের বাখুণ্ডা নামক স্থানে প্রায় ২০০ মিটার, মহিলা রোড এলাকায় ৩০০ মিটার এবং তালমা মোড়ে ১০০ মিটার অংশের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। চলতি সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা যান চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
আগের থেকেই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও পদ্মাসেতু চালুর পর সেই গুরুত্ব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই সড়কটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট। যা ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ একাধিক জেলার যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি।
প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন চলাচল করে এই সড়কটি দিয়ে। অথচ ব্যস্ততম এই সড়কটি বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে চরম অব্যবস্থাপনায়। পুরো সড়কজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গর্ত। কোথাও বড়, কোথাও ছোট, আবার কোথাও গভীর। আর বর্ষার সময় সেই গর্তেই জমে থাকে বৃষ্টির পানি। অনেক স্থানে রাস্তা চেনারই উপায় নেই। বোঝা যায় না কোথায় গর্ত আর কোথায় সমতল। এসব গর্ত এখন যাত্রী ও চালকদের কাছে যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগীরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিদিন ঘটছে নানা ধরণের দুর্ঘটনা। কখনো গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে ভেঙে যাচ্ছে। আবার কখনো যানবাহন মাঝ রাস্তায় বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। এই ৩২ কিলোমিটার সড়ক যেতে একই গাড়ির চাকা দিনে তিন থেকে চারবার পর্যন্ত পাংচার হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অসুস্থ রোগী নিয়ে চলা অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা এই রাস্তায় পড়ে যায় চরম বিপাকে। ঝাঁকুনিতে অনেক রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে পড়ে। সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় অনেক সময় ঘটে প্রাণহানি। তখন তাদের কাছে এই সড়ক হয়ে ওঠে দুঃসহ অভিজ্ঞতার এক জ্যান্ত যন্ত্রণা।
তারা আরও জানান, এই সড়ক এখন শুধু চলার রাস্তা নয়, মানুষের অসহায়ত্ব, দুর্দশা আর নীরব কান্নার প্রতিচ্ছবি। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, হাসপাতালে ছুটে চলা রোগী, খেটে খাওয়া দিনমজুর কিংবা অফিসগামী চাকরিজীবী—সবার জীবন এই সড়কে এসে আটকে আছে।
সড়কটি নিয়ে দীর্ঘদিন যাত্রী ও যানবাহন চালকদের নানা অভিযোগ থাকলেও ভ্রুক্ষেপ ও কর্ণপাত করছেন না সড়কটির তদারকির দায়িত্বে থাকা দফতর ফরিদপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়ক ও জনপথের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে এরই মধ্যে সড়কে ধান লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে অনেকের।
সড়কে ধানের চারা লাগানোর প্রতিবাদ দেখে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) তুমুল বৃষ্টির মধ্যে দায়সারা কাজ করতে দেখা গেছে তাদের। সড়কে জমে থাকা গর্তের পানি সরিয়ে ইট-বালু দিয়ে ভরাট করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা বৃষ্টির ভেতর গর্তে সামান্য ইট-বালু ফেলে দায় মুক্তি নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় মানুষ ও যাত্রীদের মতে, এই সংস্কার দুই-তিন দিনও টিকবে কিনা তা সন্দিহান। তবু কাগজে-কলমে ‘কাজ চলছে’। আর এই কাজের নামে হরিলুট করবে সরকারি টাকা। কিন্তু জনগণের ভোগান্তি থেকেই যাবে।
যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বার্তা২৪.কমকে জানান, এ সড়ক মেরামতের জন্য ইতোমধ্যেই ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ পেয়েছে। তাদের সাথে একটি চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আবহাওয়া অনুকূলে আসলেই কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ফরিদপুর-ভাঙা আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা বলেন, প্রতিশ্রুতি নয়, খুব দ্রুতই প্রয়োজন টেকসই ও মানসম্মত সংস্কার। নইলে এই সড়ক আর দুর্ঘটনার খবর নয়, একদিন হয়ে উঠবে ইতিহাসের এক অনন্ত বেদনার নাম।