Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সেই আবেদ আলীসহ ১৭ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সংস্থাটির দুইজন উপপরিচালক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসা পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলী রয়েছেন। আলোচনায় আসা আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (৮ জুলাই) অভিযানে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির সাইবার বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম।

সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, আমরা নন ক্যডারের কিছু পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের তথ্য পেয়েছি। ওই সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ জনের বেশি গ্রেফতার করেছি। তাদের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে গতকাল রোববার বেরিয়ে আসে এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসি’র উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার।

প্রশ্নফাঁসকারী চক্রটি গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে বেছে নেয়। এই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করতে ছদ্মবেশ ধারণ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিম। ছদ্মবেশী এক নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থীকে তুলে দেওয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর ৫ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি পাঠানো হয় পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।

এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আবেদ আলী। ধর্মকর্ম পালনে পিছিয়ে না থাকা এই গাড়িচালক জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসারে নিজেকে দানবীর হিসেবে উপস্থাপনেরও চেষ্টা করেছেন আবেদ আলী।

ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম যেন বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু আলোচিত লোকজনের মতো সিয়ামও মানুষের জন্য কাজ করার অনেক ভিডিও পোস্ট করেছেন। তবে বাবার সম্পদ বানানোর নেপথ্যের গল্প সামনে চলে আসায় সিয়ামকেও তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি দিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি করছেন কেউ কেউ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সেই আবেদ আলীসহ ১৭ জন গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০৮:০১:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসির প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সংস্থাটির দুইজন উপপরিচালক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসা পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলী রয়েছেন। আলোচনায় আসা আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার (৮ জুলাই) অভিযানে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির সাইবার বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম।

সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, আমরা নন ক্যডারের কিছু পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের তথ্য পেয়েছি। ওই সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ জনের বেশি গ্রেফতার করেছি। তাদের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে গতকাল রোববার বেরিয়ে আসে এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে চক্রটির বিরুদ্ধে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর, উপ-পরিচালক জাহাঙ্গির আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসি’র উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার।

প্রশ্নফাঁসকারী চক্রটি গত ৫ জুলাই (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিয়োগ পরীক্ষাকে বেছে নেয়। এই পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির তথ্য ফাঁস করতে ছদ্মবেশ ধারণ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিম। ছদ্মবেশী এক নিয়োগপ্রত্যাশী প্রার্থীকে তুলে দেওয়া হয় চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর ৫ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত যে প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, হোয়াটসঅ্যাপে তার একটা কপি পাঠানো হয় পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে। আর অজ্ঞাত স্থানে রেখে চুক্তিবদ্ধ শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হয় আগের রাতেই।

এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন আবেদ আলী। ধর্মকর্ম পালনে পিছিয়ে না থাকা এই গাড়িচালক জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসারে নিজেকে দানবীর হিসেবে উপস্থাপনেরও চেষ্টা করেছেন আবেদ আলী।

ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম যেন বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কিছু আলোচিত লোকজনের মতো সিয়ামও মানুষের জন্য কাজ করার অনেক ভিডিও পোস্ট করেছেন। তবে বাবার সম্পদ বানানোর নেপথ্যের গল্প সামনে চলে আসায় সিয়ামকেও তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি দিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি করছেন কেউ কেউ।