কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের মাঝে বাবার স্নেহ পেয়েছি। আপনাদের মাঝে ভাইয়ের আদর পেয়েছি। আমি আপনাদের সেবা করতে চাই। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংলগ্ন টাউনশিপ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
দেশের জন্য বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবার স্বপ্নটাই পূরণ করতে চাই। তাই আপনাদের মাঝে আমি যে দিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, আমার কেউ ছিল না, পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। আর এই বাংলাদেশের মানুষকেই আমি আমার পরিবার হিসেবে নিয়েছি, আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। কাজেই আপনাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাটাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, বিদায়ের আগে বলে যাই—রিক্ত আমি, নিস্ব আমি, দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
জনসভায় বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে আবেগাপ্লত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার বোন রেহানা আর আমি বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন শুনি আমাদের কেউ নেই, আমরা এতিম হয়ে গেছি! তার পর দেশে আসতে পারিনি, জিয়াউর রহমান দেশে আসতে দেয়নি। বার বার বাধা দিয়েছে, সব বাধা উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি শুধু একটি মাত্র কথা চিন্ত করে যে, আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্ট করেছেন, মানুষের কল্যাণ চেয়েছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটা দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, চিকিৎসা পাবে, প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। তার আদর্শ বুকে নিয়ে ও পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়শীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। সেটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই জয়ী করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছে। আমাদের হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু একটাই কাজ, বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত থাকে, যেভাবে আমার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন- ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেই বাংলাদেশই আমি গড়তে চাই। আমার বাবার স্বপ্নটাই আমি পূরণ করতে চাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ চেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তার (বঙ্গবন্ধুর) কন্যা। আমার একটাই দায়িত্ব, দেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগের চিকিৎসা পাবে। প্রতিটি ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান অবরোধ কর্মসূচির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা শুধু ধ্বংস করতে জানে, ওরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। ওদের থেকে আপনারা সাবধান থাকবেন। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে এদেশের জনগণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট চান সরকারপ্রধান।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই পারবে, অন্য কেউ পারবে না। কারণ তাদের দায়িত্ববোধ নেই। মনুষত্ববোধ থাকলে কেউ জীবন্ত মানুষকে পুড়ে হত্যা করতে পারে না। তারা মানুষকে পুড়ে মারছে। গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। ওরা শুধু ধ্বংস করতে জানে, কল্যাণ জানে না। ওদের থেকে সাবধান থাকবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়। কারণ আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। বাংলাদেশ এখন বদলে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। আগামীতে আবার নির্বাচন আসছে। আপনারা আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে বাকি কাজ করার সুযোগ দেবেন।
শিগগির মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এমন আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, যখন যুদ্ধ বাঁধল রাশা-ইউক্রেন; স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি একটু বেড়েছে, কিন্তু সেটাও নিয়ন্ত্রণের আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, ইনশাল্লাহ খুব শিগগির এই মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে, থাকতে পারবে।
দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মানুষের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে যখন পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকরণভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, আমাদের জেলেদের কার্ড দিয়েছি এবং আমরা তাদের খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে থাকি এবং বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি। যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করি।
জনসভায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, এই দেশ আরও সুন্দর হোক, আরও উন্নত হোক। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়, এরা খুন-হত্যা, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, চোরা কারবারি, অস্ত্র চোরাকারবারি এইগুলি তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ… যে পরিবর্তন আমরা করেছি, যার বয়স আজ ১৫ বছর সে মনে করবে এটা তো সেরকমই ছিল। কিন্তু তা না, এমন কি ২০ বছরের ২৫ বছরের যে ছেলে সে একবার চিন্তা করে দেখুক বাংলাদেশ এখন বদলে গেছে। কারণটা হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কীভাবে? নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই, নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে দিয়েছেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও আমি আপনাদের কাছে চাইবো যে, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যেন আপনাদের সেবা করতে পারি। আর যে কাজগুলি এখনও বাকি, সেই কাজগুলি যেন এসে করতে পারি, তার জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, বলেন আর হাত তুলে দেখান। তখন উপস্থিত জনতা হাত তুলে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন। সরকারপ্রধান তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
এর আগে দুপুরে কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করে ট্রেনে করে রামুতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছান তিনি।