মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুরে পিকনিক বাসের আসনে বসা নিয়ে দুই জনের দ্বন্দ্বের জেরে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের আহতরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের অমল হালদার (৫০), সুমন হালদার (২৪), রাধিকা হালদার (৫০), লিটন হালদার (৪২), বিপ্লব হালদার (৫০), মনমোহন মন্ডল (৪০), শ্যামল হালদার (৫৭), বিশু হালদার (৫২), মানিক হালদার (৪৫), অখিল হালদার (৫৫), পরিতোষ হালদার (৩৫), নারায়ণ হালদার (৪৫), প্রতাপ হালদার (২৫), প্রেমানন্দ হালদার (৫৭), খিরোদ বৈরাগী (৬০), অধির রায় (৩৫), মুনমত রায় (৩০), রতন শিকদার (৪৫), প্রকাশ বৈরাগী (১৭), শান্ত মন্ডল (১৮), বাবুল মৃধা ( ১৮) প্রমুখ। আহতরা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ, আহত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের ‘নিত্যানন্দ গোষ্মামী স্মৃতি সংঘ’ ক্লাব থেকে নড়াইলে পিকনিকে যায় অর্ধশত মানুষ। পিকনিক শেষে ফেরার পথে বাসে সামনে বসা নিয়ে একই এলাকার সুশীন হালদারের ছেলে মিল্টন হালদার ও জগদীশ বৈরাগীর ছেলে প্রকাশ বৈরাগীর সাথে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রাতে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব নেয় এলাকার মুরব্বিরা। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হালদার ও বৈরাগী বংশের দুই গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে আহত হয় কমপক্ষে ৩০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
মাদারীপুর সদরের কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৯নং ইউপি সদস্য মামুন ফকির বলেন, এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ দুপক্ষের উত্তেজনা, পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে নিত্যগোপাল গোস্বামী স্মৃতি সংঘের সভাপতি অংশুপতি ভক্ত বলেন, পিকনিকের বাসে মিল্টন ও প্রকাশের মধ্যে ঝগড়া হলে আমিসহ কয়েকজন মিলে ওদের দুজনকে মিলিয়ে দেই। তারপরও তারা বাস থেকে নেমে বাড়ি আসার পথে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
এই ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে রোগীদের দেখতে আসেন স্থানীয় কেন্দুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. রায়হান কবীর। তিনি বলেন, মর নিত্যগোপাল গোস্বামী স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত বনভোজনের বাসে বসা নিয়ে দুইটি ছেলে সাথে দ্বন্দ্ব হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষ হয়েছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ গ্রহণ করবেন।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, মারামারির ঘটনায় আহত ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। একসাথে এতো রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, পিকনিকের বাসে সামনে বসা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এখনো এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, কলাগাছিয়া গ্রামের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ ৩০ জন আহত হন। তিন জনকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। যারা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তারা সবাই শঙ্কামুক্ত। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।