আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
এই প্রথম উত্তর কোরিয়ায় কোনো মার্কিন সেনা গ্রেফতার হয়েছেন। গত ১৮ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সীমান্ত পার হয়ে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্য ট্রাভিস কিং। উত্তরে প্রবেশের পরই তাকে নিজেদের জিম্মায় নেয় দেশটি।
আর সেই সৈন্যকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত তথ্যসহ মুখ খুলেছে উত্তর কোরিয়া। তারা দাবি করেছে, মার্কিন সেনা ট্রাভিস কিং তাদের জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীতে ‘দুর্ব্যবহার ও বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণে’ তিনি উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে এসেছেন।
আটক মার্কিন সেনার নাম ট্র্যাভিস কিং। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, ট্র্যাভিস উত্তর কোরিয়ায় থাকতে চান। আমেরিকা তার পছন্দ নয়। উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনকে তিনি জানিয়েছেন, বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের দেশ আমেরিকা। তার মতো কৃষ্ণবর্ণের মানুষদের এখনও আমেরিকায় দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বাঁচতে হয়। সে কারণেই আর দেশে ফিরে যেতে চান না ট্র্যাভিস। তিনি উত্তর কোরিয়ায় থাকতে চান।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে উত্তর কোরিয়ার এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ট্রাভিসকে ‘যে কোনো উপায়ে’ দেশে ফিরিয়ে আনা।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ট্রাভিসের এই দাবি নিজের কি না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উত্তর কোরিয়ায় যাওয়ার পর থেকে ট্রাভিস কিংয়ের কাছ থেকে সরাসরি কোনও বার্তা মেলেনি এখনও।
কোরীয় সীমান্তে কার্যক্রম পরিচালনা করা জাতিসংঘ কমান্ডের সহায়তায় ট্রাভিস কিংকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১৬ আগস্ট) পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা জানান, যেকোনও উপায়ে ট্রাভিসকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।
উত্তর কোরিয়ায় ট্রুাভিস কি অবস্থায় আছে তা নিয়ে কিছু জানায়নি পিয়ংইয়ং। তবে তারা বলছে, ট্রাভিস কিং স্বীকার করেছেন যে তিনি অবৈধভাবে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন। এ ব্যাপারে তারা কোনও শাস্তি হবে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি কোরীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ।
ট্রাভিস এখন কোথায় আছে সে বিষয়েও কিছু জানানি বার্তা সংস্থাটি। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, তদন্তের এক পর্যায়ে ট্রাভিস কিং স্বীকার করেন যে মার্কিন সেনাবাহিনীতে তাদের সঙ্গে অমানবিক ও বর্ণবাদী আচরণ করা হয়। তিনি সেজন্য ক্ষুব্ধ। এজন্য তিনি উত্তর কোরিয়া কিংবা তৃতীয় কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। যুক্তরাষ্ট্রে সমাজ ব্যবস্থায় চলমান বৈষম্যে তিনি থাকতে চান না।
সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় সেনাবাহিনীর আচরণভঙ্গের দায়ে শাস্তিতে ছিলেন তিন। দুই মাস শাস্তিভোগ করে ১০ জুলাই ছাড়া পান। এরপর তার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার উত্তর কোরিয়ায় আগেই পালিয়ে যান ট্রাভিস।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ট্রাভিস সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
ট্রাভিস সেনাবাহিনীতে ২০২১ সাল থেকে আছেন। তিনি সেনাবাহিনীতে মূলত একজন নজরদারি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন। যখন তিনি উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেন তখন তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন ছিলেন। বর্তমানে ট্রাভিসকে ফিরিয়ে আনতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের আগে, হামলার অভিযোগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই মাসের জন্য জেল খাটেন। গত ১০ জুলাই তিনি মুক্তি পান। মুক্তির পরই তার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
কিন্তু অন্যান্য কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে গিয়ে একটি ট্যুর টিমের সঙ্গে চলে যান উত্তর-দক্ষিণকে বিভক্ত করা ডিমিলিটারাইজড জোনে (ডিএমজেড)। সেখান থেকেই উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেন তিনি।