স্পোর্টস ডেস্ক :
সব কিছুই পক্ষে ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের। অপরাজেয় ৯২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন ডেভন কনওয়ে। তার পর মহেন্দ্র সিং ধোনি স্কোরবোর্ড দুইশতে নিয়ে যেতে অবদান রেখেছেন। তার পরেও শেষ দিকে জমে ওঠা ম্যাচে চেন্নাই শেষ হাসি হাসতে পারেনি। বরং শেষ বলের রোমাঞ্চে তিন রান নিয়ে পাঞ্জাব কিংসকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন সিকান্দার রাজা। তাতে আইপিএলে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে পাঞ্জাব।
২০১ রানের লক্ষ্যে পাঞ্জাবের শেষ ওভারে ৯ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাজা-শাহরুখ খানের কেউ চাহিদা মেটাতে একটি বাউন্ডারিও মারতে পারেননি! তার পরেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা।
পাথিরানার কড়া বোলিংয়ে একটি সিঙ্গেল, পরে লেগ বাই ও ডট বলের পর দুটি ডাবল নিয়ে শেষ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ রানে। সেখানেও রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিন রান নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন রাজা।
রোববার (৩০ এপ্রিল) চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক চেন্নাই। দুই ওপেনার ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে মিলে ৮৬ রানের জুটিতে বড় স্কোরের মঞ্চ গড়ে দেন। ঋতুরাজ ৩১ বলে ৩৭ রান করে আউট হলেও কনওয়ে ৯২ রানে অপরাজিত থাকেন। চেন্নাইয়ের এই দুই ব্যাটার বাদে আর কেউ তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। কনওয়ে ৫২ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় ৯২ রানে অপরাজিত থাকেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান আসে শিভাম দুবের ব্যাট থেকে। ধোনির ৪ বলে ১৩ রানের ইনিংসেই মূলত ২০০ ছুঁতে পারে চেন্নাই।
পাঞ্জাবের বোলারদের মধ্যে আরশদীপ সিং, স্যাম কারান, রাহুল চাহার ও সিকান্দার রাজা একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
২০১ রানের জবাবে খেলতে নেমে দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও প্রভসিমরন সিংয়ের ব্যাটিং তাণ্ডবে ৪.২ ওভারে ৫০ ছুঁয়ে ফেলে পাঞ্জাব। ধাওয়ান ১৫ বলে ২৮ রান করে আউট হন। অথর্ব তাইদেকে সঙ্গে নিয়ে প্রভসিমরন ৩১ রানের জুটি গড়েন। আউট হওয়ার আগে প্রভসিমরন ২৪ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন। এই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর আরও ১৩ রান যোগ হতেই আউট হন অথর্ব। তিনি ১৭ বলে ১৩ রান করে আউট হন। এই ব্যাটার ছাড়া বাকি সব ব্যাটারই ইমপ্যাক্ট ইনিংস খেলেছেন।
অথচ একটা সময় জয়ের জন্য চেন্নাইকেই ফেভারিট মনে হচ্ছিল। রান তুলতে গিয়ে কঠিন সংগ্রামে পড়ে গিয়েছিলেন স্যাম কারান ও লিয়াম লিভিংস্টোন। একটা সময় ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল ৭২ রান। পরে তাদের ব্যাটিংয়েই ম্যাচের মোড় ঘুরেছে। ১৬তম ওভারে ৪ বলে ৩ ছক্কা মেরে ম্যাচটা কাছে নিয়ে যেতে অবদান রাখেন লিভিংস্টোন। একই ওভারে লিভিংস্টোন ফিরে গেলেও সমস্যা হয়নি। তখন সমীকরণ দাঁড়ায় ২৪ বলে ৪৮ রানে! তার পরের ওভারে ১৭ রান নিয়ে ম্যাচটা আরও কাছে যেনে যান কারান ও জিতেশ।
চতুর্থ উইকেটে লিয়াম লিভিংস্টোন ও স্যাম কারান মিলে ৫৭ রান যোগ করেছেন। লিভিংস্টোন ২৪ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ৪০ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। এরপর স্যাম কারানকে সঙ্গে নিয়ে জিতেশ আরও ১৯ রান যোগ করেন। ২০ বলে ২৯ রান করে কারান যখন আউট হন, তখনও জয় থেকে ৩১ রান দূরে পাঞ্জাব।
শেষ ওভারে পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ৯ রানের। ‘নতুন মালিঙ্গা’ খ্যাত মাথিশা পাথিরানা চেন্নাইকে ম্যাচেই রাখেন। লড়াই গড়ায় শেষ বলে। শেষ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩ রানের। উইকেটের পেছনে ধোনি থাকায় স্বাগতিক দর্শকরা আশায় ছিলেন মিরাকলের। কিন্তু রাজা এই সময় চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। পাথিরানার স্লোয়ার বলটি স্কয়ার লেগে ঠেলে দেন। বল চলে যায় ডিপ ফাইন লেগের দিকে। ফিল্ডার দৌঁড়ে বাউন্ডারি বাঁচাতে পারলেও ততক্ষণে দৌঁড়ে ৩ রান নিয়ে নেন পাঞ্জাবের দুই ব্যাটার। ৭ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন রাজা। অপরপ্রান্তে ৩ বলে ২ রানে অপরাজিত থাকেন শাহরুখ খান।
চেন্নাইয়ের বোলারদের মধ্যে তুষার দেশপান্ডে সর্বোচ্চ তিনটি এবং রবীন্দ্র জাদেজা দুটি উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট নেন মাথিশা পাথিরানা।
এই জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে উঠেছে পাঞ্জাব। ৯ ম্যাচে চেন্নাইয়েরও ১০ পয়েন্ট। কিন্তু শ্রেয়তর রান রেটে তারা চারে অবস্থান করছে। ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে গুজরাট। ১০ পয়েন্ট নিয়ে তার পরেই অবস্থান রাজস্থানের। সমান পয়েন্ট তিনে রয়েছে লখনউ।