Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাগলা মসজিদের ৯ দানবাক্সে ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

খোলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। বরাবরের মতো এবারও নতুন রেকর্ড। পাওয়া গেলো ২৮ বস্তা টাকা। চলছে গণনা। মসজিদের ৯টি লোহার দানবাক্স ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৭টায় খোলা হয়েছে। এরপর সকাল ৯টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় এক এক করে ২৮টি বস্তায় টাকাগুলো ভরাট করা হয়।

এর আগে, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল দানবাক্স খোলার পর আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল ২৭ বস্তা টাকা। আশা করা যাচ্ছে, এবার টাকার পরিমাণও গতবারের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

এবার প্রথম সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম, লে. কর্নেল রিয়াজুল করিম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদসহ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়।

টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ মাদ্রাসার ১৪৫ জন ছাত্র, ঐতিহ্যবাহী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার ১১৩ জন ছাত্রসহ ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। এ ছাড়া মসজিদ কমিটির ১৫ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটির অবস্থান। মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এবার দিন বেশি হওয়ায় একটি ট্রাংক দেওয়া হয়েছিল। পরে মসজিদের দোতলায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবারও ভালো কিছু হতে চলেছে।

এর আগে, সর্বশেষ চলতি বছর ২০ এপ্রিল ৯টি দানবাক্স থেকে ২৭ বস্তায় রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। তারও আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া যায়।

গত বছর চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে।

টাকা গণনাকাজে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহুয়া মমতাজ, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ মোট ২২০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন। সারা দিন টাকা গণনা শেষে জানা যাবে এবারের দানের পরিমাণ।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে দানখয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।

মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি আরও জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। সেখানে ২২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এবার দানের টাকা রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮ কোটিরও বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, পাগলা মসজিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েন আছে। তা ছাড়া এবার সেনা সদস্যরাও রয়েছেন। আজ টাকা গণনায় বাড়তি পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমত জানান, সকাল সোয়া ১০টায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা গণনা হয়ে গেছে। গণনার সময় চার দফায় সব টাকা জমা করা হবে রূপালী ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ শাখায়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

পাগলা মসজিদের ৯ দানবাক্সে ২৮ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

প্রকাশের সময় : ১২:৪১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

খোলা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। বরাবরের মতো এবারও নতুন রেকর্ড। পাওয়া গেলো ২৮ বস্তা টাকা। চলছে গণনা। মসজিদের ৯টি লোহার দানবাক্স ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৭টায় খোলা হয়েছে। এরপর সকাল ৯টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় এক এক করে ২৮টি বস্তায় টাকাগুলো ভরাট করা হয়।

এর আগে, চলতি বছরের ২০ এপ্রিল দানবাক্স খোলার পর আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল ২৭ বস্তা টাকা। আশা করা যাচ্ছে, এবার টাকার পরিমাণও গতবারের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

এবার প্রথম সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তরিকুল ইসলাম, লে. কর্নেল রিয়াজুল করিম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদসহ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়।

টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কাজী মহুয়া মমতাজ, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ মাদ্রাসার ১৪৫ জন ছাত্র, ঐতিহ্যবাহী জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার ১১৩ জন ছাত্রসহ ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। এ ছাড়া মসজিদ কমিটির ১৫ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।

জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটির অবস্থান। মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এবার দিন বেশি হওয়ায় একটি ট্রাংক দেওয়া হয়েছিল। পরে মসজিদের দোতলায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবারও ভালো কিছু হতে চলেছে।

এর আগে, সর্বশেষ চলতি বছর ২০ এপ্রিল ৯টি দানবাক্স থেকে ২৭ বস্তায় রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। তারও আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া যায়।

গত বছর চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে।

টাকা গণনাকাজে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহুয়া মমতাজ, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ মোট ২২০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন। সারা দিন টাকা গণনা শেষে জানা যাবে এবারের দানের পরিমাণ।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে দানখয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।

মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি আরও জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। সেখানে ২২ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এবার দানের টাকা রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮ কোটিরও বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, পাগলা মসজিদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স মোতায়েন আছে। তা ছাড়া এবার সেনা সদস্যরাও রয়েছেন। আজ টাকা গণনায় বাড়তি পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

সিন্দুক খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমত জানান, সকাল সোয়া ১০টায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা গণনা হয়ে গেছে। গণনার সময় চার দফায় সব টাকা জমা করা হবে রূপালী ব্যাংক, কিশোরগঞ্জ শাখায়।