আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে অভিযোগ প্রতিদিনই জোরদার হচ্ছে। দিন যত সমানে গড়াচ্ছে ততই ভোট কারচুপি নিয়ে নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। ভোটে অনিয়মের প্রতিবাদে আদালত থেকে রাজপথ—সব জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে বিরোধীরা। এমন পরিস্থিতিতে কারচুপির অভিযোগ মাথায় পেতে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলি চাথা। একই সঙ্গে তিনি নিজের ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য জড়িত কর্মকর্তার বিচার চাইলেন।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) লিয়াকত আলি বলেন, রাওয়ালপিন্ডির জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ভোটে কারচুপি হয়েছে। এ কাজে তিনি সহায়তা করেছেন। এ জন্য বিবেকের তাড়নাবোধ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলি দাবি করেন, পিন্ডিতে ১৩ জন প্রার্থীকে জোর করে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ৫০ হাজার ভোটে ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, এমন প্রার্থীকে ভোট বেশি দেখিয়ে জয়ী করেছি।’
লিয়াকত বলেন, ‘আমি রওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে অবিচার করেছি। আমি আজ ফজরের নামাজের পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। তবে পরে আমি চিন্তা করলাম, আমি কেন মহাপাপের মৃত্যুকে বরণ করে নেব? কেন আমি সব কিছু মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেব না?’
কমিশনার বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডি ডিভিশনে আমি ভোট জালিয়াতির দায়দায়িত্ব মেনে নিচ্ছি। এবং আমার নিজেকে পুলিশে সোপর্দ করছি।’
কমিশনার লিয়াকত বলেন, তিনি এই শহরে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তবে ‘দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে’ নিজের ভাবমূর্তিকে এভাবে কলঙ্কিত করায় তিনি অনুতপ্ত।
লিয়াকত আরও বলেন, ‘এই কাজ করার পর আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। এখন আমি শান্তিপূর্ণভাবে মরতে চাই। আমি যা করেছি, সে জন্য আমার শাস্তি হোক। আমার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসিপির জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তার শাস্তি হওয়া উচিত।’
রাওয়ালপিন্ডি বিভাগে ১৩টি জাতীয় পরিষদ আসন এবং ১৭টি প্রাদেশিক পরিষদ আসন রয়েছে। এসব আসনের মধ্যে জাতীয় পরিষদে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রার্থীরা ১১টি আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি দুটির একটিতে একজন স্বতন্ত্র এবং অন্যজন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে প্রাদেশিক পরিষদের ২৭টি আসের মধ্যে ১৫টি পিএমএল-এন এবং ১১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে রাওয়ালপিন্ডির কমিশনারের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। সংস্থাটি বলছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের কোনো নির্দেশ দেননি।
এ ছাড়া এমন বিস্ফোরক ঘোষণা দেওয়ার পর পরই লিয়াকত আলিকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পাকিস্তান পুলিশ। পরে অবশ্য এই অবস্থান থেকে সরে এসে তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় তারা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণের তিন দিন পর সব আসনের ফল ঘোষণা করে ইসিপি। এমন বিলম্ব দেশটিতে নজিরবিহীন বলছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী দল পিটিআইসহ বিভিন্ন দল ভোট কারচুপি ও ফল পরিবর্তনের অভিযোগে বিক্ষোভ করে আসছে।