আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তানের শিল্পনগরী ফয়সালাবাদে কমপক্ষে পাঁচটি গির্জায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা ঘটেছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বুধবার (১৬ আগস্ট) জারানওয়ালা এলাকায় এ তাণ্ডব চালানো হয়েছে। কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে দেশটির একদল উন্মত্ত জনতা। এ সময় খ্রিস্টানদের বেশ কিছু বাড়িঘরও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ ও খিস্ট্রান নেতারা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৯৬ শতাংশই মুসলিম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, পুলিশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের কাছে কোরআনের কয়েকটি পাতা পাওয়া গেছে যেখানে লাল কালিতে অবমাননাকর মন্তব্য লেখা ছিল বলে পুলিশ দাবি করছে।
ফয়সালাবাদ পুলিশের মুখপাত্র নাভিদ আহমদ বলেছেন, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দুই ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ওই সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে।
খ্রিষ্টধর্মীয় নেতা আকমল ভাট্টি জানিয়েছেন, একদল লোক কমপক্ষে পাঁচটি গির্জায় আগুন দিয়েছেন। আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার পর সেগুলোয় লুটপাট চালানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মসজিদের মাইক থেকে এক ধর্মীয় নেতা সহিংসতায় উসকানি দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, গির্জার ভবন থেকে ধোঁয়া উড়ছে। সেখান থেকে বের করে আনা আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু লোক পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন ডটকমকে বলেছেন, ব্লাসফেমির অভিযোগে জারানওয়ালা তহসিলের বেশ কয়েকটি গির্জা ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা।
জারানওয়ালার পাদরি ইমরান ভাট্টি বলেন, ইসা নগরি এলাকার চারটিসহ এসব গির্জায় তাণ্ডব চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাড়িও গুঁড়িয়ে দিয়েছেন সহিংস লোকজন।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ খ্রিস্টানদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী ওই এলাকার একটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে।
এদিকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ একটি মামলা করেছে। পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান উসমান আনোয়ার বলেন, বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ওই এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই এলাকায় সরু গলিতে ছোট দুটি থেকে তিনটি গির্জা রয়েছে। সেখানে একটি প্রধান গির্জাও অবস্থিত। বিক্ষোভকারীরা এসব গির্জার কিছু অংশ ভাঙচুর করেছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, শান্তি কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। প্রদেশজুড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে খ্রিষ্টধর্মীয় নেতাদের অভিযোগ, ঘটনার সময় নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ।
এক টুইটে (বর্তমানে এক্স) দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার বলেন, ফয়সালাবাদের জারানওয়ালার চিত্র দেখে আমি হতবাক। যারা আইন লঙ্ঘন করবে এবং সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।