Dhaka মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয় : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয় বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার প্রচলন সম্পর্কে ফরিদা আখতার বলেন, এটা বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয়। যারা পহেলা বৈশাখে ইলিশ কিনে খাচ্ছেন, তারা আইন লঙ্ঘন করছেন। ঢাকায় একটি রীতিমতো আরোপিত সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে পান্তা ভাতের সঙ্গে মরিচ ভর্তা কিংবা অন্য মাছ খেলেও তো অসুবিধা নেই।

তিনি বলেন, বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখের আগের দিন—চৈত্র সংক্রান্তি—একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ওই দিনে কোনো ধরনের আমিষ খাওয়ার রেওয়াজ নেই, বরং ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার চল রয়েছে। আর বৈশাখের দিনটিতে বাতাসা, দই-চিড়া কিংবা ছাতুর শরবত খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ইলিশ না খেলে দিনটা শেষ হয়ে যায় না। আরও অনেক ধরনের মাছ আছে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জাটকা রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও উৎসব থেমে থাকবে না। বরং আমাদের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতনতার এই সুযোগটাও বড় উৎসবের অংশ হতে পারে।

জাটকা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ পালিত হবে। তিনি বলেন, ‘যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণে বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, সরবরাহ বাড়বে, দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

ফরিদা আখতার বলেন, এ বছরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’। জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। ১ কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশে রূপান্তর করা হবে।

এ সময় তিনি বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, এ দেশের প্রায় ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই ইলিশ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয় : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৩:১৩:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয় বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার প্রচলন সম্পর্কে ফরিদা আখতার বলেন, এটা বাংলা সংস্কৃতির অংশ নয়। যারা পহেলা বৈশাখে ইলিশ কিনে খাচ্ছেন, তারা আইন লঙ্ঘন করছেন। ঢাকায় একটি রীতিমতো আরোপিত সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে পান্তা ভাতের সঙ্গে মরিচ ভর্তা কিংবা অন্য মাছ খেলেও তো অসুবিধা নেই।

তিনি বলেন, বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখের আগের দিন—চৈত্র সংক্রান্তি—একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ওই দিনে কোনো ধরনের আমিষ খাওয়ার রেওয়াজ নেই, বরং ১৪ প্রকার শাক খাওয়ার চল রয়েছে। আর বৈশাখের দিনটিতে বাতাসা, দই-চিড়া কিংবা ছাতুর শরবত খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। ইলিশ না খেলে দিনটা শেষ হয়ে যায় না। আরও অনেক ধরনের মাছ আছে।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জাটকা রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকলেও উৎসব থেমে থাকবে না। বরং আমাদের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতনতার এই সুযোগটাও বড় উৎসবের অংশ হতে পারে।

জাটকা সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ’ পালিত হবে। তিনি বলেন, ‘যদি জাটকা সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ইলিশের উৎপাদন অনেক গুণে বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে বাজারেও এর প্রভাব পড়বে, সরবরাহ বাড়বে, দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

ফরিদা আখতার বলেন, এ বছরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’। জাটকা হচ্ছে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। ১ কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির অধিক হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশে রূপান্তর করা হবে।

এ সময় তিনি বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, এ দেশের প্রায় ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই ইলিশ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।