আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পশ্চিম আফ্রিকার কেপ ভার্দে উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনার ফলে ৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে নারী ও শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
কেপ ভার্দের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌকাটিতে ১০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ৩৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ৬০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সাল দ্বীপের কাছে।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে নৌকাটি শতাধিক আরোহী নিয়ে সেনেগাল থেকে যাত্রা শুরু করে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, নৌকাটিকে প্রথমবারের মতো চিহ্নিত করা হয় গত সোমবার। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, নৌকাটি ডুবে গেছে। পরে জানা যায়, নৌকাটি তখনো ভাসছে কিন্তু ডুবে যাওয়ার পথে রয়েছে।
সেনেগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই নৌকাটি ১০১ জন যাত্রী নিয়ে গত ১০ জুলাই দেশ ছেড়েছিল। মন্ত্রণালয় বলেছে, বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের জন্য কেপ ভার্দে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা। যাত্রীদের গন্তব্য ছিল স্পেনের কানারি দ্বীপে। সেখান থেকে তারা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
উদ্ধারকৃত এসব মানুষকে সাল দ্বীপের উপকূলে পৌঁছাতে সাহায্য করা হচ্ছে বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে আবার কিছু মানুষকে স্ট্রেচারে করেও উপকূলে নিতে দেখা যায়। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকাটি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে ছিল এবং নৌকাটিতে থাকা প্রায় সবাই সেনেগাল থেকে এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, কাঠের তৈরি নৌকাটিকে প্রথম দেখতে পাওয়া যায় সাল দ্বীপ থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে। স্পেনের একটি মাছ ধরা নৌকা সেটিকে প্রথম দেখতে পায় এবং পরে তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
জীবিতদের মধ্যে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি চার শিশু-কিশোর রয়েছে বলে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। নৌকার বেশিরভাগ যাত্রী সেনেগালের হলেও তাতে সিয়েরা লিওন এবং গিনি-বিসাউয়ের মতো অন্য দেশগুলোর অভিবাসীও আরোহী হিসেবে ছিল বলে জানা গেছে।
সাল দ্বীপের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোসে মোরেরা বলেছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে এবং তাদের যত্ন নেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলোমেনা গনকালভস বলেছেন, ‘আমরা জানি অভিবাসনের এই সমস্যাগুলো বৈশ্বিক সমস্যা। এর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, প্রচুর আলোচনা এবং বৈশ্বিক কৌশল প্রয়োজন। আমাদের সবাইকে – সব দেশকে-টেবিলে বসতে হবে এবং সমুদ্রে যেন আর প্রাণ হারাতে না হয় সে বিষয়ে আমরা কী করতে পারি তা দেখতে হবে।’
এর আগে গত জুলাইয়ের শেষের দিকে সেনেগালের রাজধানী ডাকার উপকূলে অভিবাসীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। পশ্চিম আফ্রিকার কেপ ভার্দে হয়ে স্পেনে যাওয়ার এই রুটে গত বছর নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৫৯ জন। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মৃত্যু হয়েছে ১২৬ অভিবাসনপ্রত্যাশীর। এমনটি জানিয়েছে আইওএম। সূত্র : বিবিসি।