আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিপুল ভোটে এবারের পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতেছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে রেকর্ড জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও অনেক পিছিয়ে আছে বিজেপি। রাজ্যের উত্তরবঙ্গে তাঁদের ঘাঁটিও হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কাল থেকে যখন ফল ঘোষণা শুরু হয়েছে, তখনো ফল ঘোষণার কেন্দ্রে শাসকগোষ্ঠীর সমর্থকেরা বিরোধীদের তাড়িয়ে দেন বিভিন্ন জায়গায়।
বুধবার (১২ জুলাই) ভারতীয় সময় সকাল ১০টা পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ হাজার ২২৯ আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত তৃণমূল জিতেছে ৩০ হাজার ৩৯১টি আসন। বিজেপি ৮ হাজার ২৩৯, বাম দল ২ হাজার ৬৫৭ এবং কংগ্রেস জিতেছে ২ হাজার ১৫৮টি আসন।
পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৩ হাজার ৭৬১টি, বিজেপি ৪৬৮টি, কংগ্রেস ১০২টি ও বাম দল ১০০টি আসনে জয়লাভ করেছে। আর ২০টি জেলা পরিষদের মধ্যে মঙ্গলাবার (১১ জুলাই) রাত ১২টার হিসাব অনুযায়ী তৃণমূল ১২টিতে জয়লাভ করে। অন্য জেলা পরিষদের ফলাফল ওই রাতে পাওয়া যায়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসন বিনা যুদ্ধে জিতেছিলেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। বাকি আসনেও সিংহভাগ দখল করেছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারও সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল শাসক দল। কিন্তু বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দলের প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবু অন্তত ১২ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেভাগে জিতে নেয় তৃণমূল।
রাজ্যের বিরোধী জোটের অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূল ভোট কারচুপি করেছে, জাল ভোট দিয়েছে, ব্যালট ছিনতাই করেছে। শাসক দল তৃণমূল একচ্ছত্রভাবে ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।
যদিও বিরোধীদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে শাসক দল তৃণমূল। তারা বলেছে, মমতার উন্নয়নের ধারা দেখে রাজ্যবাসী বিপুল ভোটে জয়ী করেছে তৃণমূলকে। তবে দেখা দেছে, ২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এবার। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ এবার প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে নামলেও তারা তৃণমূলের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কিছু আসন ছিনিয়ে নিয়েছে। যদিও এবার এ নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪১ জনের প্রাণ গেছে। শুধু তা–ই নয়, গতকাল ফল গণনার দিনেও একজনের প্রাণ গেছে। গতকাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরে ফলাফল ঘোষণার দিন এক আইএসএফ কর্মীকে গুলি করে শাসক দলের নামধারী দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছে। ফলে এ বছরের এই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে নিহত হয়েছে ৪২ জন। গত নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল ২৩।
এই ফলাফলের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি, বাম-কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে রাজ্যবাসী। আস্থা রেখেছে মমতার উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর।
আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বিজেপি যে ফেক অপজিশন, তা এবার মানুষ বুঝে গিয়েছে।
আর বিজেপির রাজ্য সম্পাদক সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘সিপিএম ভোট কাটুয়া হয়ে বহু জায়গায় তৃণমূলকে জিততে সাহায্য করেছে।
আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এ জয় আমার প্রণম্য গণদেবতার জয়। এই নির্বাচন আবার প্রমাণ করল বাংলার মানুষের হৃদয়ে তৃণমূল কংগ্রেসই আসীন।
এক ফেসবুক পোস্টে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলদলীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গ্রামবাংলায় তৃণমূলের জয়জয়কার। তৃণমূলের প্রতি জনগণের ভালোবাসা, আবেগ ও সমর্থনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই রাজ্যের জনগণের হৃদয়ে শুধু তৃণমূল, এ নির্বাচন তা প্রমাণ করেছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

























