Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী আটক

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি : 

নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা আলী এবং তার ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান সহ তিনজনকে আটক করেছে নৌবাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

রোববার (১১ আগস্ট) ভোর ৪টার দিকে হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাসের নিজ বাসা থেকে নৌবাহিনীর একটি দল তাঁকে আটক করে।

এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ওছখালীর নিজ বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়।

তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক সংসদ আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের ছেলে হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিসহ তিনজনকে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের হেফাজতে নেয়। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার প্রধান সড়কে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হাতিয়া উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া গত কিছু দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীকে ডাকাত ও জলদস্যু সম্রাট বলে ও বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।

নৌবাহিনী হাতিয়ার কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিকুর রহমান জানান, হাতিয়ার প্রায় সাত লাখ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন মোহাম্মদ আলী আলী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৬ বছর নিজের নির্বাচনী এলাকায় নিজের বিরোধী মতের কাছে মোহাম্মদ আলী এক আতঙ্কের নাম ছিল। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তার একক নিয়ন্ত্রণে হাতিয়া হয়ে উঠে অনিয়ম ও নৌরাজ্যের স্বর্গরাজ্য।

নৌবাহিনীর হাতিয়া ক্যাম্পের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাতিয়া উপজেলার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। তাই উপজেলার শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতিবিদ ছিলেন। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলে। এরপর জাতীয় পার্টিতে। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থন নিয়ে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির সমর্থনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও ঋণখেলাপি হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। আয়েশা ফেরদাউস ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলী।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী আটক

প্রকাশের সময় : ০২:০৮:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি : 

নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা আলী এবং তার ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান সহ তিনজনকে আটক করেছে নৌবাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র তিনজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

রোববার (১১ আগস্ট) ভোর ৪টার দিকে হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাসের নিজ বাসা থেকে নৌবাহিনীর একটি দল তাঁকে আটক করে।

এর আগে, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ওছখালীর নিজ বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়।

তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী সাবেক সংসদ আয়েশা ফেরদাউস ও তাদের ছেলে হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক আলী অমিসহ তিনজনকে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের হেফাজতে নেয়। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার প্রধান সড়কে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে হাতিয়া উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া গত কিছু দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীকে ডাকাত ও জলদস্যু সম্রাট বলে ও বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।

নৌবাহিনী হাতিয়ার কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিকুর রহমান জানান, হাতিয়ার প্রায় সাত লাখ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন মোহাম্মদ আলী আলী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৬ বছর নিজের নির্বাচনী এলাকায় নিজের বিরোধী মতের কাছে মোহাম্মদ আলী এক আতঙ্কের নাম ছিল। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে তার একক নিয়ন্ত্রণে হাতিয়া হয়ে উঠে অনিয়ম ও নৌরাজ্যের স্বর্গরাজ্য।

নৌবাহিনীর হাতিয়া ক্যাম্পের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মুশফিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাতিয়া উপজেলার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। তাই উপজেলার শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতিবিদ ছিলেন। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলে। এরপর জাতীয় পার্টিতে। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থন নিয়ে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির সমর্থনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মাহমুদুর রহমান বেলায়েতের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও ঋণখেলাপি হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। আয়েশা ফেরদাউস ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলী।