নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিশ্বকাপে দুরন্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। তবে বিশ্বকাপের ২৪তম ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে রেকর্ড রানে হারতে হয়েছে ডাচদের। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের লজ্জা পেতে হয়েছে তাদের। অজিদের কাছে নেদারল্যান্ডস হেরেছে ৩০৯ রানে।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি ছিল ২৭৫ রানের। সেই রেকর্ডটিও করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ বিশ্বকাপে পার্থে আফগানিস্তানকে এত বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল অজিরা। এবার অজিরা নিজেদের রেকর্ড ভাঙলো নেদারল্যান্ডসকে উড়িয়ে দিয়ে।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপে দুইবার দেখা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৩ সালে ৭৫ রানে জিতেছিল তারা। ২০০৭ সালে আরও বড় ব্যবধানে হার মানে হয়েছিল ডাচদের। ওইবার ২২৯ রানে জিতেছিল অজিরা। ১৬ বছর পর মাঠের লড়াইয়ে আরও বিশাল হারের লজ্জা পেতে হলো নেদারল্যান্ডসকে।
দিল্লিতে বুধবার (২৫ অক্টোবর) আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি এবং স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনের হাফ সেঞ্চুরিতে বড় স্কোরের আভাস দিচ্ছিল তারা। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাট হাতে ডাচ বোলারদের ওপর বুলডোজার চালান। বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন তিনি ৪০ বল খেলে।
নেদারল্যান্ডসকে রানের পাহাড়ে চাপা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ছুড়ে দিয়েছিল ৪০০ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা নেহায়েত মন্দ হয়নি ডাচদের। দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’ ডড এবং বিক্রমজিৎ সিং শুরু করেছেন ভালোভাবেই। ৪ ওভারে রান উঠেছিল ৭ এর উপরে। তবে ওটুকুই ছিল বলার মত। ৫ম ওভারে ম্যাক্সকে সরাসরি বোল্ড করে ধ্বংসযজ্ঞের শুরু করেন মিচেল স্টার্ক। ৯ রান আর এক ওভার পর আবার উইকেটের পতন। ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত রানআউটে সাজঘরে ফেরেন বিক্রমজিৎ।
১০ রান পর আরও একবার উইকেটের পতন। এবার অধিনায়ক কলিন অ্যাকারম্যান ফিরে গিয়েছেন জশ হ্যাজেলউডের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে। আর ৫৩ রানে নির্ভরযোগ্য বাস ডি লিড আউট হলে ডাচদের পরাজয় হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি কমলা শিবিরকে।
সাইব্যান্ড অ্যাঙ্গেলব্রাখট, তেজা নিদামানুরু কেউই টিকতে পারেননি এমন বোলিং তোপের সামনে। ৮৪ থেকে ৯০ এই ৬ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় ডাচরা। মাঝে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। যদিও শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয়েছে তাকে। ডাচদের ইনিংসে বিক্রমজিৎ সিং ছাড়া ২০ এর বেশি রান করতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯০ রানেই অলআউট হয়ে ৩০৯ রানের পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৩য় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ দশমিক ৫ ওভারে ২৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান অজি ওপেনার মিশেল মার্শ ব্যাক্তিগত ৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৩২ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ক্যারিয়ারের ৩১তম ফিফটি তুলে ৬৮ বলে ৭১ রানে আউট হন অজি ব্যাটার। ৯টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে নিজের ইনিংস সাজান স্মিথ। মারনাস লাবুশানে ৪৬ বলে ৭টি চার ও ২টি ছয়ে অষ্টম ফিফটিতে ৬২ রানে বিদায় নেন।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ক্যারিয়ারের ২২তম শতক তুলে নেন ওপেনার ওয়ার্নার। সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এ বাঁহাতি ব্যাটার। ৯৩ বলে ১১টি চার আর ৩টি ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন তিনি। এর আগে অবশ্য ১২ বলে ১৪ রান করা জস ইংলিসকে ফেরান ডি লিড।
শেষ ১২ ওভারে চার-ছক্কার ঝড়ে অস্ট্রেলিয়াকে একাই চারশ’র কাছাকাছি নিয়ে যান ম্যাক্সওয়েল। এর মধ্যে প্রথম ২০ বলে ৩৪ রান করেন তিনি। ৪, ৪, ৬, ৬, ৬ৃ ৪৯তম ওভারে বাস ডি লিডের প্রথম পাঁচ বলে ২৬ রান তুলে ইতিহাস গড়েন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এইডেন মার্করামের করা ৪৯ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ৯ বল কম খেলেই ভেঙে দেন অজি অলরাউন্ডার। তিন অঙ্কের মাইলফলকে পৌঁছাতে খেলেছেন মাত্র ৪০ বল। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৪৪ বলে নয়টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১০৬ রান করেন তিনি। প্যাট কামিন্স ৯ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।
প্রত্যাশিতভাবে ম্যাচসেরা হয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ৪৪ বলে ৯ চার ও ৮ ছয়ে ১০৩ রান করেন তিনি।
পাঁচ ম্যাচে টানা তৃতীয় জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চারে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। সমান খেলে ২ পয়েন্ট নিয়ে সবার শেষে নেদারল্যান্ডস।