স্পোর্টস ডেস্ক :
লিওনেল মেসির ফুটবল ক্যারিয়ার পূর্ণতা পেয়েছে কাতারে। ক্লাব ক্যারিয়ারে অনন্য মেসি গত বছর জিতেছেন বহুল কাঙ্খিত বিশ্বকাপ শিরোপা। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসি যে জার্সি পরে খেলেছিলেন তা নিলামে তোলা হচ্ছে। শুধু ফাইনাল নয় বিশ্বকাপে তিনি যে সাতটি জার্সি পরে খেলেছেন তার মধ্যে ছয়টি তোলা হচ্ছে নিলামে। নিউ ইয়র্কে ওই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। সোথবি ওই নিলামের আয়োজন করেছে।
মেসির নেতৃত্বেই কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে পেনাল্টিতে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। নিলামে থাকছে মেসির ফাইনালে পরা জার্সিটিও।
সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথমার্ধে, মেক্সিকোর বিপক্ষে, নক আউট পর্বে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এবং ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে পরা মোট ছয়টি জার্সি এ নিলামে তোলা হবে আগামী মাসে। নিলামকারীদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সোদবেইয়ের মতে, এই জার্সিগুলোর মূল্য ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
ক্রীড়াঙ্গনে এ পর্যন্ত রেকর্ড ১০.১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডানের জার্সি। মেসির বিশ্বকাপ জেতা জার্সিগুলো সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মেসির জার্সিগুলো থেকে ৮০ লাখ পাউন্ডের বেশি আয় করা যাবে। এখন পর্যন্ত কোনো ফুটবলারের পরা জার্সি সর্বোচ্চ নিলামে বিক্রি হয়েছে আর্জেন্টাইন গ্রেট ডিয়েগো ম্যারাডোনার। তার বিখ্যাত হ্যান্ড অব গড জার্সিটি ৭১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
মেসির জার্সি বিক্রির অর্থের একটি অংশ চ্যারিটি ফান্ডে অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে। মেসির জার্সির নিলাম নিয়ে সোথবি বলেছে, ‘২০২২ বিশ্বকাপে পরা মেসির জার্সিগুলো উত্তরাধিকারের নিদর্শন। যা ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, পরিশ্রমের বার্তা বহন করে। এটি শুধু একটি বিশ্বকাপ জয় জয়, বরং বেশি কিছু। আগামী দিনে তার ওই জার্সি শ্রেষ্ঠত্ব বহন করবে।’
বিশ্বকাপে ফাইনালসহ সাত গোল করে গোল্ডেন বল জেতা মেসির ফাইনালের ওই জার্সির দাম ১০ মিলিয়ন ডলার বা ১১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সোথবি।
সোথেবি জানিয়েছে, দাম এক কোটি ডলার পেরিয়ে গেলে খেলাধুলার স্মারক নিলামে তোলার ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রির রেকর্ড হবে। কোনো খেলোয়াড়ের জার্সি নিলামে সর্বোচ্চ দামে বিক্রির রেকর্ডটি বাস্কেটবল লেজেন্ড মাইকেল জর্ডানের। ১৯৯৮ সালে শিকাগো বুলসের হয়ে এনবিএ’র চূড়ান্ত পর্যায়ে জর্ডান যে জার্সি পরেছিলেন, গত বছর সেটি এক কোটি এক লাখ ডলারে বিক্রি হয়।
এর আগেও মেসির জার্সি নিলামে উঠেছে। ২০১৭ সালে তার বার্সার একটি জার্সি নিলামে ওঠে। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এল ক্লাসিকোয় শেষ সময়ে গোল করে দলকে জেতানো যে জার্সি প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া ডিয়াগো ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের হ্যান্ড অব গড জার্সি গত বছর বিক্রি হয়েছে ৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১০০ কোটি টাকায়।
আর্জেন্টাইন গ্রেট ‘হ্যান্ড অব গড’খ্যাত গোলের জন্য বিখ্যাত ম্যাচটিতে তার পরিহিত জার্সি ৭১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, মেসির জার্সি নিলামে তোলার ঘোষণায় হুমকির মুখে পড়েছে ম্যারাডোনার জার্সি নিলামের রেকর্ডমূল্যটিও।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাধুলার স্মারকের প্রতি ঝুঁকছে। এটাকে বেশ দ্রুতবর্ধনশীল বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মেসির বিশ্বকাপের জার্সিগুলো নিলামে তোলার ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এসি মোমেন্টো। আগামী ৩০শে নভেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে বিডিং চলাকালীন ব্রোকার হাউস সোথেবির নিউইয়র্ক সদর দফরে মেসির জার্সিগুলো বিনামূল্যে জনসাধারণের দেখার জন্য প্রদর্শন করা হবে।
সোথেবি জানিয়েছে, নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ ইউনিকাস প্রকল্পে দান করা হবে। এই প্রকল্প লিও মেসি ফাউন্ডেশনের অধীনে বার্সেলোনার শিশু হাসপাতালে একটি উদ্যোগ, যা বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করে।