Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্যাতিত নারীর আর্তনাদের বিপরীতে তাদের অট্টহাসি

মামলার প্রধান তিন আসামি

পশুর চেয়েও অধম ও ভয়ঙ্কর এরা। নির্যাতিত নারীর আর্তনাদের বিপরীতে এরা অট্টহাসি দিয়েছে। বার বার কাকুতি মিনতি জানানোর পরেও এদের মন গলেনি। বরং নির্যাতিত নারীকে সমাজে চিরদিনের জন্য হেয় করার জন্য বিবস্র করার ভিডিও এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য এ নৃশংস ঘটনার নায়ক বাদল ও দোলোয়ার গ্রেফতার হয়েছে। দেশব্যাপি এখন এদের শাস্তির দাবি জোড়ালো হচ্ছে।

কতটা নৃশংস, কতটা পাষণ্ড আর বর্বর হলে এভাবে বিবস্ত্র করে একজন নারীকে নির্যাতন করা যায়? উত্তরটা বোধহয় কারোই জানা নেই। এরা যে পশুর চেয়েও ভয়ানক তারই প্রতিফলন এই বর্বরতা। রোববার দুপুরে যখন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ভাইরাল। সারা দেশে ছি ছি রব!

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক নারী সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় গোঙাচ্ছে, কাঁদছে; সেই সঙ্গে বলছে-বাবা গো আমাকে ছেড়ে দে। ‘আব্বা গো তোর আল্লাহ’র দোহাই ছাড়ি দে!

আশপাশের ২০-২৫ বছরের ছেলে গুলো হায়েনার মতো হাসছে আর বলছে-উল্টা, উল্টা, উল্টা! কারণ বিবস্ত্র ওই নারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওপর হয়ে শুয়ে কাঁদছিল আর বলছিল-এরে আব্বা গো, তোগো আল্লাহ’র দোহাইরে। ঘটনাটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের। এরিমধ্যে ঘটনার মূল হোতাদের পরিচয় পাওয়া গেছে।

এ দিকে বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য অভিযুক্ত দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবারকে এতদিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে ঘটনাটি ধামাচাপা থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বিষয়টি কাউকে জানাননি। তাই ঘটনার ৩২ দিন পার হলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করতে পারেননি তিনি।

এ ঘটনায় রবিবার (৪ অক্টোবর) আবদুর রহিম (২২) নামে এক যুবককে আটক করেছে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। আর পুলিশের ৫টি ইউনিট অন্য বখাটেদের ধরতে অভিযানে নেমেছে।

বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে আসে। এরপর এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।

থানা সূত্র আরও জানায়, পুলিশ ভিকটিম ওই নারীকে তার বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে। তিনি পুলিশকে জানান, ২০/২৫ দিন আগে এ ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন : সেই রাতে তিন্নির ঘরে কী ঘটেছিল?

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূকে বাবার বাড়িতে ধর্ষণ চেষ্টা, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে এবং আরেক আসামি দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ জানান, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের দু’জনকে রোববার (৪ অক্টোবর) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে এ ঘটনায় আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফলে এ ঘটনায় মোট চারজন গ্রেপ্তার হলো।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।

ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। রাতেই এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। মামলার পরই গ্রেপ্তার হয় দুজন।

ভাইরাল ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

নির্যাতিত নারীর আর্তনাদের বিপরীতে তাদের অট্টহাসি

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০

পশুর চেয়েও অধম ও ভয়ঙ্কর এরা। নির্যাতিত নারীর আর্তনাদের বিপরীতে এরা অট্টহাসি দিয়েছে। বার বার কাকুতি মিনতি জানানোর পরেও এদের মন গলেনি। বরং নির্যাতিত নারীকে সমাজে চিরদিনের জন্য হেয় করার জন্য বিবস্র করার ভিডিও এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্য এ নৃশংস ঘটনার নায়ক বাদল ও দোলোয়ার গ্রেফতার হয়েছে। দেশব্যাপি এখন এদের শাস্তির দাবি জোড়ালো হচ্ছে।

কতটা নৃশংস, কতটা পাষণ্ড আর বর্বর হলে এভাবে বিবস্ত্র করে একজন নারীকে নির্যাতন করা যায়? উত্তরটা বোধহয় কারোই জানা নেই। এরা যে পশুর চেয়েও ভয়ানক তারই প্রতিফলন এই বর্বরতা। রোববার দুপুরে যখন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ভাইরাল। সারা দেশে ছি ছি রব!

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক নারী সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় গোঙাচ্ছে, কাঁদছে; সেই সঙ্গে বলছে-বাবা গো আমাকে ছেড়ে দে। ‘আব্বা গো তোর আল্লাহ’র দোহাই ছাড়ি দে!

আশপাশের ২০-২৫ বছরের ছেলে গুলো হায়েনার মতো হাসছে আর বলছে-উল্টা, উল্টা, উল্টা! কারণ বিবস্ত্র ওই নারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য ওপর হয়ে শুয়ে কাঁদছিল আর বলছিল-এরে আব্বা গো, তোগো আল্লাহ’র দোহাইরে। ঘটনাটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের। এরিমধ্যে ঘটনার মূল হোতাদের পরিচয় পাওয়া গেছে।

এ দিকে বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য অভিযুক্ত দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা ভুক্তভোগী গৃহবধূর পরিবারকে এতদিন অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে ঘটনাটি ধামাচাপা থাকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বিষয়টি কাউকে জানাননি। তাই ঘটনার ৩২ দিন পার হলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করতে পারেননি তিনি।

এ ঘটনায় রবিবার (৪ অক্টোবর) আবদুর রহিম (২২) নামে এক যুবককে আটক করেছে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। আর পুলিশের ৫টি ইউনিট অন্য বখাটেদের ধরতে অভিযানে নেমেছে।

বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নজরে আসে। এরপর এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন তিনি।

থানা সূত্র আরও জানায়, পুলিশ ভিকটিম ওই নারীকে তার বাবার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে। তিনি পুলিশকে জানান, ২০/২৫ দিন আগে এ ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন : সেই রাতে তিন্নির ঘরে কী ঘটেছিল?

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূকে বাবার বাড়িতে ধর্ষণ চেষ্টা, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে এবং আরেক আসামি দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ জানান, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের দু’জনকে রোববার (৪ অক্টোবর) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে এ ঘটনায় আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফলে এ ঘটনায় মোট চারজন গ্রেপ্তার হলো।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।

ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। রাতেই এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। মামলার পরই গ্রেপ্তার হয় দুজন।

ভাইরাল ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকে। তিনি প্রাণপণে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু, তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেনি। বরং হামলাকারীদের একজন তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে ও পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেয়। এরপর একটা লাঠি দিয়ে মাঝে মাঝেই আঘাত করতে থাকে। এসময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চেঁচায় আরেকজন।