Dhaka শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্মমভাবে পেটানোর ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুর অর রশীদকে ইতোমধ্যে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম সেই রাতে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেই কথাও জানিয়েছেন।

নাঈম জানান, এডিসি হারুন সরাসরি তার গায়ে হাত তোলেন। রিভলবারের বাট দিয়ে আঘাত করে ঠোঁট থেতলে দেন। হারুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ তাদের পায়ের বুট দিয়ে আঘাত করেন। তখন তার মনে হয়েছিল-তিনি আর বাঁচবেন না। তখনই মারা যাবেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আনোয়ার হোসেন নাঈম জানান, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক তার এলাকার বড় ভাই। তাদের বাড়ি গাজীপুরে। তিনি বলেন, বড় ভাই বারডেম জেনারেল হাসপাতালে আছেন জেনে সেখানে ছুটে যাই। হাসপাতালের চারতলায় গিয়ে দেখি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশিদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে। আমিসহ ছাত্রলীগের আরও দুই নেতা মিলে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।

নাঈম বলেন, তখন হারুন পুলিশকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তৎক্ষণাৎ পুলিশ তাদের সেখান থেকে থানায় নিয়ে যায়। ওটা যখন আমার চোখের সামনে পড়ে তখন আমি ওদের পেছনে পেছনে থানায় যাই। আমি মূলত ছাত্রলীগের সহকর্মী এবং আমার এলাকার আজিজুল হক ভাইকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হলো তা জানতেই যাই। থানায় যেতেই তারা আমার ওপর এই আক্রমণ করে।

ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমি বলেছি, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফজলুল হক হলের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু তারপরও আমাকে মেরেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, তারা কী এজেন্ডায়, কী উদ্দেশ্যে আমাকে মারল? অবশ্যই এভাবে একজন সাধারণ মানুষকেও মারতে পারে না। সে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এভাবে আক্রমণ করেছে।

নাঈম আরও বলেন, আমাকে মারা হয় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুমের সামনেই তদন্ত অফিসারের রুমে। তখন ওসি উপস্থিত ছিলেন। সরাসরি হারুন আমার গায়ে হাত তোলেন। রিভলবারের বাট দিয়ে আঘাত করে আমার ঠোঁট থেতলে দিয়েছেন। পুলিশ নামের ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী তাদের পায়ের বুট দিয়ে আমার ওপর আঘাত করে। আমার তখন মনে হয়েছিল আর বাঁচব না । আমি তখনই মারা যাব।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাকে দেখেছেন। তারা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ দাবি জানানো হবে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তার বহিষ্কার এবং একই সাথে তাকে গ্রেফতার করা হোক।

এদিকে ঘটনার পর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) হারুনকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে বদলি করা হয়েছে। প্রথমে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। এরপর বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এডিসি হারুন অর রশীদকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কারের ভবিষ্যৎ পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেব না : নাহিদ ইসলাম

নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

প্রকাশের সময় : ১০:২২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্মমভাবে পেটানোর ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুর অর রশীদকে ইতোমধ্যে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মারধরের শিকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম সেই রাতে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। তাকে কীভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেই কথাও জানিয়েছেন।

নাঈম জানান, এডিসি হারুন সরাসরি তার গায়ে হাত তোলেন। রিভলবারের বাট দিয়ে আঘাত করে ঠোঁট থেতলে দেন। হারুনসহ ১০-১৫ জন পুলিশ তাদের পায়ের বুট দিয়ে আঘাত করেন। তখন তার মনে হয়েছিল-তিনি আর বাঁচবেন না। তখনই মারা যাবেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আনোয়ার হোসেন নাঈম জানান, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক তার এলাকার বড় ভাই। তাদের বাড়ি গাজীপুরে। তিনি বলেন, বড় ভাই বারডেম জেনারেল হাসপাতালে আছেন জেনে সেখানে ছুটে যাই। হাসপাতালের চারতলায় গিয়ে দেখি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব আজিজুল হক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশিদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে। আমিসহ ছাত্রলীগের আরও দুই নেতা মিলে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।

নাঈম বলেন, তখন হারুন পুলিশকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তৎক্ষণাৎ পুলিশ তাদের সেখান থেকে থানায় নিয়ে যায়। ওটা যখন আমার চোখের সামনে পড়ে তখন আমি ওদের পেছনে পেছনে থানায় যাই। আমি মূলত ছাত্রলীগের সহকর্মী এবং আমার এলাকার আজিজুল হক ভাইকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হলো তা জানতেই যাই। থানায় যেতেই তারা আমার ওপর এই আক্রমণ করে।

ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমি বলেছি, আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফজলুল হক হলের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু তারপরও আমাকে মেরেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, তারা কী এজেন্ডায়, কী উদ্দেশ্যে আমাকে মারল? অবশ্যই এভাবে একজন সাধারণ মানুষকেও মারতে পারে না। সে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এভাবে আক্রমণ করেছে।

নাঈম আরও বলেন, আমাকে মারা হয় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুমের সামনেই তদন্ত অফিসারের রুমে। তখন ওসি উপস্থিত ছিলেন। সরাসরি হারুন আমার গায়ে হাত তোলেন। রিভলবারের বাট দিয়ে আঘাত করে আমার ঠোঁট থেতলে দিয়েছেন। পুলিশ নামের ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী তাদের পায়ের বুট দিয়ে আমার ওপর আঘাত করে। আমার তখন মনে হয়েছিল আর বাঁচব না । আমি তখনই মারা যাব।

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাকে দেখেছেন। তারা বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ দাবি জানানো হবে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তার বহিষ্কার এবং একই সাথে তাকে গ্রেফতার করা হোক।

এদিকে ঘটনার পর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) হারুনকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে বদলি করা হয়েছে। প্রথমে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। এরপর বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে এডিসি হারুন অর রশীদকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়েছে।