নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ বা নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ কোনো প্রস্তাব পায়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
রোববার (১১ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা জানান তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই যেমন রাজপথে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো, তেমনি কূটনীতিকরাও দেখা করছেন মন্ত্রী, এমপি, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। উঠছে আন্তর্জাতিক চাপ এবং মধ্যস্ততায় সংলাপের পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথাও। তবে রাজনীতির মাঠের এসব আলোচনা কূটনীতির টেবিলে নেই।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ বা কোনো বন্ধু রাষ্ট্র থেকে সংলাপের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে জাতিসংঘকে যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপে বসা নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্র থেকে কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি গত ৯ বছরে এ ধরনের কোনো বৈঠকে ছিলাম না বা আমাকে কেউ বলেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাকে এ ধরনের প্রস্তাবনা কেউ দেননি বা নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো কাঠামোর ধারের কাছের কোনো কাঠামোর সাজেশানস কোনো বন্ধু রাষ্ট্র দেয়নি।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু জানান, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। তার এই বক্তব্য বাস্তব প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিলছে না বলে জানান শাহরিয়ার আলম। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো কনফ্লিক্ট জোন না। তবে নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে কাজ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা এটা নিয়ে (সংলাপ) কেন বলছেন, এটা আমার জানা নেই। কিন্তু কোনো রাষ্ট্র থেকে বা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এ বিষয়ে (সংলাপ) চাপে থাকা তো দূরের কথা, কোনো প্রস্তাবনাও পাইনি।
সংসদ নির্বাচনে জাতিসংঘকে যুক্ত করার বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, কোনো প্রয়োজন নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। ব্যাপক সংঘর্ষের পরিস্থিতি হলে জাতিসংঘ সেখানে থাকে। যুদ্ধের মতো কোনো পরিস্থিতি হলে জাতিসংঘ সেখানে থাকে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেককাল আগে সে রকম ছিল।
নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রচেষ্টা করছে। এটা অনেক সময় যথেষ্ট নয়। এটাকে সার্টিফাই করা লাগে। সে কারণে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এসে দেখবেন, তারা বলবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হবে, তা পালন করা হবে।
পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখছেন না জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ট্রায়াল এবং এর মাধ্যমে খুব ছোট আকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠানো হবে। সেখানে অস্বস্তিবোধ করলে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ট্রায়াল হচ্ছে এবং এটি বড় ধরনের কোনো প্রত্যাবাসন নয়। এটি যদি সফল না হয়, তাহলে আমরা তাদেরকে ফেরত নিয়ে আসতে পারব। সেক্ষেত্রে এটির বিরুদ্ধে যাওয়ার আমরা কোনো যুক্তি দেখি না।
চার রোহিঙ্গা পরিবারকে জাতিসংঘের খাবার না দেওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, যাদেরকে ওই ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল, তারা জাতিসংঘ থেকে খাবার পায়নি। আশা করি, জাতিসংঘের সদর দফতর এটি নজরে নেবে। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন না ঘটে, সেটি অবশ্যই জাতিসংঘ দেখবে।’
প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জেনেভায় ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিটে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৩ জুন সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন। এই সামিটে বাংলাদেশের লক্ষ্য ইউরোপসহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করা।