নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য এ বছরের সেরা কৌতুক আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে এবং আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের এক দফার দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
গত বৃহস্পতিবার সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যখন সুষ্ঠুভাবে আমরা নির্বাচন করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা, এর অর্থটা কী? দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভালো ভালো নির্বাচন করি। অথচ দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে, ভালো নির্বাচন হয় না। এটাই হচ্ছে জোক অব দ্যা ইয়ার, বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক। হাসিনার এ কথায় ঘোড়ায়ও হাসে। এই হচ্ছে অবস্থা।
তিনি বলেন, সরকার জনগণকে বোকা বানাতে চায়। দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছুই এই সরকার ধ্বংস করেছে। আজ দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ঘরে চাল নাই, ডাল নাই, তেল নাই। এই দিকে সরকারের কোনো খেয়াল নাই, সরকারের খেয়াল একটাই কীভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে। এই দেশকে শোষণ করতে হবে। এটা পরিষ্কার যে, সরকার রাষ্ট্র চালাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। দানবীয় এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ দলের অসংখ্য নেতাকর্মী জেলখানায় আছেন, অনেকের নামে মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুল কারণ হিসাবে বলেন, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে যে আন্দোলন চলছে তাতে যেন বিরোধী দলের নেতারা অংশগ্রহণ করতে না-পারে, এজন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এজন্য কী মহানগরের সমাবেশে লোক আসা বন্ধ রয়েছে? প্রতিটি কর্মসূচিতে মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে ও লাখে লাখে আসছে একটি মাত্র দাবি নিয়ে। তা হচ্ছে, এই সরকারের পদত্যাগ।
বিএনপি রমহাসচিব বলেন, সরকার জনগণকে বোকা বানাতে চায়। দ্রব্যমূল এতো বেড়েছে যে, মানুষ দুমুঠো ভাত মুখে তুলতে পারে না। বিদ্যুৎ-তেলের দাম বাড়তির দিকে। সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। একটি মাত্র খেয়াল তাদের- ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। শোষণ করতে হবে।
তিনি প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলের কথা উল্লেখ করে বলেন, ডিসি-এসপিদের বদলি করে তাদের মতো করে সাজানো হচ্ছে। নির্দেশ দিয়েছে- যেখানে যতো পার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দাও। মামলা নেই এরকম নেতাকর্মী বিএনপিতে নেই।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রথমবারের মতো আয়োজিত স্থানীয় সরকার দিবসের অনুষ্ঠান হয়। সেখানের সারা দেশ থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের বলেছেন, ভোট হবে। ভোটে লোকজন আনতে হবে। ২০১৪ সালে ভোট করেছেন। দেখা গেছে, ভোট কেন্দ্রে ভোটার নাই, কুত্তা শুয়ে আছে। শফিউল আলম প্রধান বলেছিলেন, কুত্তা মার্কা নির্বাচন। ২০১৮ সালে তো আগের রাতেই ভোট শেষ হয়ে গেছে।
তিনি আমেরিকা ও ভারতের দুটি পত্রিকার লেখা উদ্ধৃত করে বলেন, তারা বলছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। তারপর তাদের (সরকার) বোধোদয় হয় না। দৌঁড়দৌঁড়ি করে সেলফি তুলছে।
বর্তমান সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ডাক এসেছে দাবি করে বলেন, এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন হবে না।
এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় নেমেছি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ তারা পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচনে বিরোধী দল তথা বিএনপি নেতারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে তড়িঘড়ি করে সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মামলা ও সাজা দিয়ে এই আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেতে মাঠে নেমেছে। আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। কারণ তারা পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, সরকার জনগণকে বোকা বানাতে চায়। আজকে দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ঘরে চাল নাই, ডাল নাই, তেল নাই। এই দিকে সরকারের কোনো খেয়াল নাই। সরকারের খেয়াল একটাই কিভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে। এই দেশকে শোষণ করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেভাবে পারো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দাও। তাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনে সাজার ব্যবস্থা করো। দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থাসহ সব কিছুই এই ফ্যাসিস্ট সরকার ধ্বংস করেছে। এটা পরিষ্কার যে সরকার রাষ্ট্র চালাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। তাই অবিলম্বে এই সরকারকে বলব, সংসদ ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
ফখরুল বলেন, তাই অবিলম্বে এই সরকারকে বলব, সংসদকে ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কিন্তু তারা জানেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এ কারণে তারা আবারও দলীয় সরকারের অধীনে অবৈধভাবে নির্বাচন করতে চায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এই গণতন্ত্র দিবসে বলতে চাই এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সরকার বিভিন্ন অজুহাতে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ও বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। তারা নানাভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের আটক ও গ্রেফতার করে হয়রানি করছে। কারণ কি? কারণ একটাই- সামনে নির্বাচন সমস্ত বিরোধীদল নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে আন্দোলন তাতে যেন অংশ নিতে না পারে এই জন্যে এই সরকার এ কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এরা জনগণকে বোকা বানাতে চায়, প্রতারণা করতে চায়। গ্রেফতার করে কি আজ এই সমাবেশ লোক আসা থামাতে পারছে তারা। না, পারেনি। পারবেও না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ’৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন কোনো ভয় না পেয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তরুণরা। আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এখনই সময়, ভয়াবহ সরকারকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে এই গণতন্ত্র দিবসে বলতে চাই এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল মিল্টন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।