নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে অনুরোধ আসেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি শাখার মহাপরিচালক সেহেলী সাবরিন।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সেহেলী সাবরীন বলেন, আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এখন পর্যন্ত কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক অনুরোধ জানায়নি। তবে গত ৯-২৩ জুলাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি নির্বাচনী প্রাক-মূল্যায়ন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। আগামী অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের একটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশি পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নির্বাচন কমিশন জারি করা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপ নিয়ে হালনাগাদ তথ্য কী, কবে হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সেহেলী সাবরিন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতি বছর সেক্টরভিত্তিক বিভিন্ন সংলাপ আয়োজিত হয়ে থাকে। এই নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে উভয় দেশের রাজধানীতে পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০২২ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অষ্টম যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ায় এর ধারাবাহিকতায় সংলাপের নবম আসর এ বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশা করছি।
ইদানীংকালে ঢাকা-ওয়াশিংটন যে সমস্ত বৈঠক হচ্ছে সেগুলো কি নিয়মিত পর্যায়ের নাকি বিশেষ- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বৈঠক বা আলোচনা একটি নিয়মিত বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক রফতানি বাজার এবং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও তারা সবার আগে অবস্থান করছে।
ফলে একটি গতিশীল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আলোচনা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বৈঠক, সংলাপ কিংবা উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের সফর এই নিয়মিত প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি শাখার মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, এছাড়াও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র সর্বাগ্রে অবস্থান করছে। ফলে একটি গতিশীল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আলোচনা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বৈঠক, সংলাপ কিংবা উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের সফরও নিয়মিত প্রক্রিয়ারই অংশ।
মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
সম্প্রতি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বাংলাদেশ সফর করেন। তার এই সফরের উদ্দেশ্য কী, কাদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন এমন প্রশ্নে সেহেলী সাবরিন বলেন, টনি ব্লেয়ার ২৬ থেকে ২৭ জুলাই বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এ বৈঠকে টনি ব্লেয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আগামী দিনে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রেলওয়ে খাতের উন্নয়নে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চান।
এক প্রশ্নের জবাবে সেহেলী সাবরিন বলেন, টনি ব্লেয়ার সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে কারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আর আমাদের রেলখাতের যেহেতু অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন চালু রয়েছে সেহেতু এ বিষয় নিয়ে টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে।
টনি ব্লেয়ার কেন এসেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন। সেটা একটা উদ্দেশ্য ছিল। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন তিনি। অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এসেছেন।
ব্রিফিংয়ে সেহেলী সাবরীনের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ব্রহ্মপুত্র নদে নিজেদের অংশে চীন আটটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, এতে আন্তর্জাতিক নদীর পানির সুষম বণ্টন হবে না। পর্যাপ্ত পানি না পেলে বিপর্যস্ত হবে বাংলাদেশ। এনিয়ে চীনের কাছে বাংলাদেশ কিছু জানতে চেয়েছে কি না।
জবাবে সেহেলী সাবরীন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে তিব্বত অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ বাঁধ দিচ্ছে চীন। ফলে পানির সুষম বণ্টন না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করছি। পরে কোনো তথ্য পেলে আপনাদের জানাবো।
এ সময় টনি ব্লেয়ার দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারকে অবহিত করেন। সফরকালে তিনি ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।