নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কোনো উদ্বেগ নেই। মূলত তারা এ দেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (১০ জুলাই) সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্বেগের কথা জানিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো উদ্বেগের কথা তারা বলেননি। তারা ভালোটা আশা করছেন। কোনো খারাপ কিছু নিয়ে কোনো কথা বলেননি। বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হোক, এটাই তারা চেয়েছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী ও পরিপক্কতা অর্জন করুক, এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মূলত নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আমরা আলাপ করেছি। এতে চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিও ছিল। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তাদের সে কথাই বলেছি। শেখ হাসিনা সরকার নিয়মিত কাজ করে যাবে। এ সরকার নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। সরকারি দল তখন কেবল রুটিনওয়ার্ক করবে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেমনটি হয়। এ বিষয়ে আমি ইইউ রাষ্ট্রদূতকে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আলোচনা খুবই সফল ও অর্থপূর্ণ হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সুপারিশ ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি তারা যদি পর্যবেক্ষক দিতে চায়, তাদের সুস্বাগত। তারা আসবেন, আমাদের অতিথি। যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন, একজন কূটনীতিক নিজের আওতার মধ্য থেকে কাজ করবেন। পর্যবেক্ষকদেরও দায়িত্ব পালনে ৪১ ভিয়েনা কনভেনশনের নীতিমালা আছে। তারা সেই নীতিমালার মধ্যে দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে আমাদের কোনো আপত্তি থাকার প্রশ্ন নেই। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা সরেজমিনে দেখতে পাবেন, নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে। এ নিয়ে বাদানুবাদের কোনো সুযোগ থাকবে না।
কেন্দ্রগুলোকে সিসি টিভির আওতায় আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছি কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। তাদের ছয়জনের একটি দল এসেছে। তারা খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা দলের সঙ্গেও বসবে আগামী ১৫ জুলাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, পার্লামেন্টের বিলুপ্তি, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তবে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা নিয়ে তারা কোনো কথা বলেছে কি না, প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না। এ কথা আমরা কেন বলবো। তারা কাকে কী অনুরোধ করবেন, এটা তাদের ব্যাপার।
বিএনপি-তো রাস্তায় আছে। তারা এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে না, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও রাস্তায় আছি। তারা বিক্ষোভে আছে, আমরা শান্তি সমাবেশে আছি।
এ মাসের শেষের দিকে ভারতে যাচ্ছেন, বিজেপির সঙ্গে বৈঠক আছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার নেতৃত্বে একটি দল চার বছর আগে ভারতে গিয়েছিল। পরে রামমাধবের নেতৃত্বে ভারত থেকে একটি দল এসেছিল। এটি দলের সঙ্গে দলের আলোচনা। ভারতের প্রসঙ্গ এলেই আপনারা প্রশ্ন করেন। কিন্তু চীনের সঙ্গে প্রতিবছর সফর বিনিময় করি, তা তো বললেন না। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন না। চীন থেকেও ১৫ জন ঘুরে এসেছি। ভারতে যাবেন পাঁচজন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, পর্যবেক্ষক আসবেন, কূটনীতিকরা আসবেন। তারা নির্বাচন মনিটরিং করবেন। তারা সরেজমিনে দেখতে পাবেন কীভাবে নির্বাচন হচ্ছে। ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বাধা নেই।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, এটি চায় তারা।
তিনি বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইইউ দেশের ৬ জনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। তারা খুঁটিনাটি সব বিষয়ে আলোচনা করবেন। ইইউ নির্বাচন অবজার্ভ করবে, ক্লোজলি মনিটরিং করবে। সরকার সবসময়ই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভিয়েনা কনভেনশনের নীতিমালা অনুযায়ী কূটনীতিকরা দায়িত্ব পালন করবেন, আমাদের আপত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হয়। সেজন্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষক থাকলে ভালো হয়। তারা সরেজমিনে দেখতে পারবেন নির্বাচন কেমন হয়। পর্যবেক্ষকরা নিজেরাই দেখবেন। বিএনপির কোনো ইস্যু নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে সরকারের উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা একটি সুন্দর নির্বাচন কামনা করেছেন। ইইউ প্রতিনিধি দল বিএনপি বা কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আহ্বান করবে কি-না সেটা প্রতিনিধি দলের নিজস্ব বিষয়।
ইইউর এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিকার্ডো শোলেরি। আর সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।