নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তদন্ত ছাড়া কেউ যেন গ্রেফতার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সত্যিকার অপরাধীদের বিরুদ্ধেই মামলা হবে। নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেটা দেখা হবে। আবার তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেফতার যেন না হয়, সেটার কথাও বলা হয়েছে। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, শুধু যারা দোষী মামলায় তাদেরই নাম দেন। অন্য কারো নাম দিয়েন না। অন্য নাম দিলে এটা তদন্ত করতে সময়ও বেশি যাচ্ছে এবং অনেক সময় নিরীহ লোকও যেন হেনস্তা না হয় এটা খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমরা কিন্তু বলে দিয়েছি যে, সাধারণ লোক যেন হেনস্তা না হয়। তদন্ত ছাড়া কাউকেই অ্যারেস্ট করা হবে না। এবং আমি ডিবিকে আজ ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিয়েছি, তাদের পরিচয় আগে দিতে হবে। এরপর গ্রেপ্তার করতে হবে। এখানে আমার ধরার কথা শুধু অপরাধীদের। আমি সাধারণ মানুষকে তো ধরার জন্য বলব না, অপরাধীদের ধরার জন্য।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মব জাস্টিসের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। কাল জাহাঙ্গীরনগরে দেখলাম… তারা তো সবচেয়ে শিক্ষিত। তাদের ক্ষেত্রে তো এই সচেতনতা আসতে হবে। একজন অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন। আইন হাতে তুলে নেওয়ার কারো কিন্তু অধিকার নেই।
তিনি বলেন, কেউ অপরাধী হলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারাও (গণমাধ্যম) একটু আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইনোসেন্ট লোক যেন কোনো অবস্থাতেই কোনো হেনস্তা না হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে পুরোনো রূপে মানবিক পুলিশ হতে উজ্জীবিত করে কীভাবে তাদের পুরোনো গৌরব ফিরে পাওয়া যায় এবং জনবান্ধব পুলিশ যেন বাস্তবে হয় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। থানা পর্যায়ে লোকজনকে অনেক সময় বিভিন্ন কাজের জন্য গিয়ে তাদের যে সমস্যা সেটা সমাধান করতে পারে না, সবসময় সমাধান সম্ভবও নয়। কিন্তু তারপরেও কীভাবে সমাধান করা যায় এটা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানত আলোচনা হয়েছে তাদের যে পুরোনো ফর্মে যেন পুলিশ যতো তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে পারে। তারা যেন জনবান্ধব পুলিশ হতে পারে। জনগণের একটা আশা, তারা যেন জনবান্ধব পুলিশ হতে পারে। সবার একটা আশা জনবান্ধব পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ট্রাফিকে যে একটা সমস্যা হচ্ছে, এই ট্রাফিকটা কীভাবে উন্নত করা যায়, চাঁদাবাজি কীভাবে বন্ধ করা যায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজিটা যদি বন্ধ হয় জিনিসপত্রের দামটা একটু সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। এই চাঁদাবাজি যেন না হয়, প্লাস এই ঘুষ এবং দুর্নীতিতে আমাদের সমাজটাকে গ্রাস করে নিছে। এটাকে কীভাবে বন্ধ করা যায় এগুলো সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে। বাদী আসামিদের চেনে না। পুরোনো ফরমেটে হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ কিন্তু আগে মামলা দিত, এই সময়ে কোনো পুলিশ একটা মামলা দিয়েছে? আগে পুলিশ ১০ জনের নাম দিয়ে ১০০ জনকে অজ্ঞাত রেখে দিত। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুলিশ মামলা দিচ্ছে না, এটা কিন্তু সাধারণ পাবলিকরা দিচ্ছে। যদি পুলিশ একটা এমন মামলা দেয় আপনি আমার কাছে আসবেন, যে ১০ জনের নাম দিয়ে, ৫০০ জনকে অজ্ঞাত করে দেওয়া। এখন যারা মামলা দিচ্ছে সাধারণ জনগণ। তাদের বলতে হবে ভাই, যারা আসল ক্রিমিনাল তার নামে মামলা দেও। কাল আমার কাছে একজন এসেছিল, বলে স্যার আমাদের যে আসল আসামি তাকে ১১ নম্বরে রাখা হয়েছে। আমি বলি কেন? তারে তো এক নাম্বারে দেবেন। বলে যে না, যারা এইটা ড্রাফট করছে তারা দিয়েছে। অন্যরা এইভাবে সাজিয়ে দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চোর সন্দেহে এক যুবককে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তারা তো (শিক্ষার্থী) সবচেয়ে শিক্ষিত। একজন অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন। আইন তো নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কারও অধিকার নেই।