Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, কাঁচাবাজার লাগামহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাজারে নতুন করে তেল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস বেড়েছে। কাঁচাবাজার যেন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আর আসছেই না। গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, ঈদুল ফিতরের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও কমেনি। সবমিলিয়ে এখন বাজার করতে গিয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার (৫ মে) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটল ৫০-৮০ টাকা, সজিনা ১২০-১৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, গাজর ৭০-১২০ টাকা, টমেটো ৪০-৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, লাউ ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা। দরে বিক্রি হচ্ছে।

দফায় দফায় দাম বেড়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।

সবজির বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, সব সবজি কিনতেই লাগছে বেশি, বেচবো কমে কেমনে? সারাদেশে বৃষ্টিবাদল হচ্ছে এ জন্য সবজির সরবরাহ কম। আর এ বছর সবজির আবাদও কম হয়েছে বলে জানি।

কারওয়ান বাজারে ক্রেতা সোহাগ হোসেন বলেন, এ বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে সবজি জাতীয় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যা দেখার কেউ নেই।

অন্যদিকে, মাছের দামও বাড়তি যাচ্ছে বাজারে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আধাকেজি ওজনের বেশি ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি বা তার উপরের ওজনের ইলিশের দর ১৬০০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাঁচকি মাছ ৪৫০-৫০০ টাকায়, ট্যাংরা ৬০০-৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৭০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাক কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ মাছ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। সিলভার কাপ ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে বাজার ভেদে ৪৫০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। কার্ফু মাছের কেজি ২৫০ থেকে বাজার ভেদে ৩০০ টাকা।

মাছ কিনতে আসা নজরুল বলেন, আমার কাছে সব মাছের দামই একটু বেশি মনে হয়েছে। আমি আজকে ছোট আকারের চিংড়ি মাছ কিনেছি ৮০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা বলেছে—এটা নাকি নদীর মাছ।

মাংসের বাজারে গরুর মাংস ৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। লাল মুরগি ৩৫০ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৪০ টাকা।

পাইকারি বাজারে ব্রয়লারের ডিমের শ বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। অর্থাৎ দোকানি এক হালি ডিম কিনছেন ৪৬ টাকায়। বিক্রি করছেন চার টাকা লাভে। এক্ষেত্রে ক্রেতাকে প্রতি হালি ডিমের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। ডজন ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লারের ডিমের ডজন ছিল ১৩৫ টাকা। হালি ছিল ৪৫ টাকা।

ঈদের পরও গরুর মাংসের দাম না কমার বিষয়ে রাজধানীর মহাখালী বাজারের ক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরুর মাংস বিক্রেতারা সবসময় শুধু উপলক্ষ্য খোঁজে। কোনো উপলক্ষ্য পেলেই তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেয়। সব শেষ ঈদ উপলক্ষ্যে তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে করল ৮০০ টাকা। কিন্তু ঈদ পেরিয়ে গেলেও দাম আর কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। বাড়তি দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। আগে ৭৫০ টাকা দাম ছিল, তারও আগে ছিল ৭০০ টাকা। যেকোনো উপলক্ষ্যে আসে আর সেই সঙ্গে বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম, তা আর কখনোই কমে না।

জানতে চাইলে রাজধানীর গুলশান লেকপাড় সংলগ্ন বাজারের মাংস বিক্রেতা চাঁদ মিয়া বলেন, গরুর যে দাম, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ, কর্মচারী বিল সবমিলিয়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি না করলে লোকসান থেকে যায়। এমনিতেই আগের চেয়ে ব্যবসার অবস্থা খারাপ। আগের চেয়ে বিক্রি অনেক কমে গেছে, অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া গরুর মাংস এখন আর কিনে না। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে বর্তমান বাজারে ৮০০ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব না।

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে পাইজাম চালের দাম। মোটাজাতের এই চাল কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। যা গত সপ্তাহেও ৫০ টাকা ছিল। বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল বিক্রি হচ্ছে তার কেজি প্রতি দাম নেওয়া হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজির। মোটা চালের মধ্যে পাইজাম ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, আটাস চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে খুদের চাল। যার কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে টাকা।

চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুল হান্নান বলেন, পাইজাম কেজিতে দুই টাকা বাড়তে৷ দাম তো বাড়তেই থাকে। প্রতিদিনই বাড়ে।

বাজারে চাল কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে পারভীন বেগম বলেন, আগে চাউলের বস্তা কিনতাম। এখন পাঁচ কেজি, ১০ কেজি এমনে কিনি। সব জিনিসের দাম বেশি। একটা জিনিস বেশি কিনলে, আরেকটা কিনতে পারি না।

সরেজমিনে আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আট ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেল ও চিনির দাম।

খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি কিনতে হলে খুঁজতে হচ্ছে দুই-চার দোকান। কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম আরও বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিপ্রতি। যা গত সপ্তাহে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে ছিল।

অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন তারা ঈদের পর থেকে কোন চিনির সরবরাহ পাননি। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ১২ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের লিটারে লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ৫৪ টাকা। এছাড়া পাম সুপার ওয়েলের দাম লিটারে বাড়ানো হয়েছে ১৮ টাকা।

এখন বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তেল-চিনির পাশাপাশি চোখ রাঙ্গাচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন। ঈদের পর থেকে মসলাজাতীয় পণ্য তিনটির দামও বেড়েছে হু হু করে। আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। যা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে আমদানি করা চায়না রসুনের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর দেশি রসুনের কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। রোজার ঈদের দুই-এক দিন পরও চায়না রসুনের কেজি ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। আর দেশি রসুন বিত্রিক্র হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

পাশাপাশি দর বেড়েছে আদার। দেশি আদা ২০০ থেকে ২২০ এবং আমদানি করা চায়না আদার কেজি ২৮০থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও দেশি আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং আমদানি করা আদার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ছিল।

এ ছাড়া বাজারে ঈদের পরে আলুর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সারাবছরই স্থিতিশীল থাকলেও মৌসুমের শুরুতে আলুর অস্থিতিশীল বাজারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা।

রামপুরা বাজারে মাসওয়ারী বাজার করতে এসে একরামুজ্জামান নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, বাজার যেন মধ্যবিত্তদের জন্যও আতঙ্কের জায়গা হয়ে গেছে। মাসের ফর্দ কাটছাঁট করতে করতে এমন অবস্থায় ঠেকেছে যা না হলেই চলে না। তারপরও কুলানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ভালো খাবার ছেড়ে সস্তা খাবার খুঁজতে হচ্ছে এখন। আমিষ প্রোটিন ভিটামিন এগুলো কী খাওয়া না খাওয়া দরকার, সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হচ্ছে শুরু দামের চোটে। বিলাসী পণ্য কেনা বাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এখন কেনা যাচ্ছে না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী, কাঁচাবাজার লাগামহীন

প্রকাশের সময় : ০২:১৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাজারে নতুন করে তেল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখনও ঊর্ধ্বমুখী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস বেড়েছে। কাঁচাবাজার যেন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আর আসছেই না। গত সপ্তাহের তুলনায় বেশ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, ঈদুল ফিতরের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও কমেনি। সবমিলিয়ে এখন বাজার করতে গিয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার (৫ মে) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটল ৫০-৮০ টাকা, সজিনা ১২০-১৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, গাজর ৭০-১২০ টাকা, টমেটো ৪০-৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, লাউ ৭০-৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা। দরে বিক্রি হচ্ছে।

দফায় দফায় দাম বেড়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।

সবজির বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, সব সবজি কিনতেই লাগছে বেশি, বেচবো কমে কেমনে? সারাদেশে বৃষ্টিবাদল হচ্ছে এ জন্য সবজির সরবরাহ কম। আর এ বছর সবজির আবাদও কম হয়েছে বলে জানি।

কারওয়ান বাজারে ক্রেতা সোহাগ হোসেন বলেন, এ বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে সবজি জাতীয় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যা দেখার কেউ নেই।

অন্যদিকে, মাছের দামও বাড়তি যাচ্ছে বাজারে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আধাকেজি ওজনের বেশি ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি বা তার উপরের ওজনের ইলিশের দর ১৬০০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কাঁচকি মাছ ৪৫০-৫০০ টাকায়, ট্যাংরা ৬০০-৭০০ টাকা, আইড় মাছ ৭০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাক কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ মাছ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। সিলভার কাপ ২০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে বাজার ভেদে ৪৫০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। কার্ফু মাছের কেজি ২৫০ থেকে বাজার ভেদে ৩০০ টাকা।

মাছ কিনতে আসা নজরুল বলেন, আমার কাছে সব মাছের দামই একটু বেশি মনে হয়েছে। আমি আজকে ছোট আকারের চিংড়ি মাছ কিনেছি ৮০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতা বলেছে—এটা নাকি নদীর মাছ।

মাংসের বাজারে গরুর মাংস ৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। লাল মুরগি ৩৫০ টাকা। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৪০ টাকা।

পাইকারি বাজারে ব্রয়লারের ডিমের শ বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। অর্থাৎ দোকানি এক হালি ডিম কিনছেন ৪৬ টাকায়। বিক্রি করছেন চার টাকা লাভে। এক্ষেত্রে ক্রেতাকে প্রতি হালি ডিমের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। ডজন ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও ব্রয়লারের ডিমের ডজন ছিল ১৩৫ টাকা। হালি ছিল ৪৫ টাকা।

ঈদের পরও গরুর মাংসের দাম না কমার বিষয়ে রাজধানীর মহাখালী বাজারের ক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরুর মাংস বিক্রেতারা সবসময় শুধু উপলক্ষ্য খোঁজে। কোনো উপলক্ষ্য পেলেই তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দেয়। সব শেষ ঈদ উপলক্ষ্যে তারা গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে করল ৮০০ টাকা। কিন্তু ঈদ পেরিয়ে গেলেও দাম আর কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। বাড়তি দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। আগে ৭৫০ টাকা দাম ছিল, তারও আগে ছিল ৭০০ টাকা। যেকোনো উপলক্ষ্যে আসে আর সেই সঙ্গে বেড়ে যায় গরুর মাংসের দাম, তা আর কখনোই কমে না।

জানতে চাইলে রাজধানীর গুলশান লেকপাড় সংলগ্ন বাজারের মাংস বিক্রেতা চাঁদ মিয়া বলেন, গরুর যে দাম, রাস্তা খরচ, দোকান খরচ, কর্মচারী বিল সবমিলিয়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি না করলে লোকসান থেকে যায়। এমনিতেই আগের চেয়ে ব্যবসার অবস্থা খারাপ। আগের চেয়ে বিক্রি অনেক কমে গেছে, অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া গরুর মাংস এখন আর কিনে না। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে বর্তমান বাজারে ৮০০ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব না।

সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে পাইজাম চালের দাম। মোটাজাতের এই চাল কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। যা গত সপ্তাহেও ৫০ টাকা ছিল। বাজারে মিনিকেট নামে যে চাল বিক্রি হচ্ছে তার কেজি প্রতি দাম নেওয়া হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে নাজির। মোটা চালের মধ্যে পাইজাম ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, আটাস চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে খুদের চাল। যার কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে টাকা।

চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুল হান্নান বলেন, পাইজাম কেজিতে দুই টাকা বাড়তে৷ দাম তো বাড়তেই থাকে। প্রতিদিনই বাড়ে।

বাজারে চাল কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে পারভীন বেগম বলেন, আগে চাউলের বস্তা কিনতাম। এখন পাঁচ কেজি, ১০ কেজি এমনে কিনি। সব জিনিসের দাম বেশি। একটা জিনিস বেশি কিনলে, আরেকটা কিনতে পারি না।

সরেজমিনে আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আট ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেল ও চিনির দাম।

খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি কিনতে হলে খুঁজতে হচ্ছে দুই-চার দোকান। কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম আরও বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিপ্রতি। যা গত সপ্তাহে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে ছিল।

অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন তারা ঈদের পর থেকে কোন চিনির সরবরাহ পাননি। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ১২ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের লিটারে লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ৫৪ টাকা। এছাড়া পাম সুপার ওয়েলের দাম লিটারে বাড়ানো হয়েছে ১৮ টাকা।

এখন বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তেল-চিনির পাশাপাশি চোখ রাঙ্গাচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন। ঈদের পর থেকে মসলাজাতীয় পণ্য তিনটির দামও বেড়েছে হু হু করে। আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। যা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে আমদানি করা চায়না রসুনের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর দেশি রসুনের কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। রোজার ঈদের দুই-এক দিন পরও চায়না রসুনের কেজি ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। আর দেশি রসুন বিত্রিক্র হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।

পাশাপাশি দর বেড়েছে আদার। দেশি আদা ২০০ থেকে ২২০ এবং আমদানি করা চায়না আদার কেজি ২৮০থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও দেশি আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং আমদানি করা আদার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ছিল।

এ ছাড়া বাজারে ঈদের পরে আলুর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সারাবছরই স্থিতিশীল থাকলেও মৌসুমের শুরুতে আলুর অস্থিতিশীল বাজারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা।

রামপুরা বাজারে মাসওয়ারী বাজার করতে এসে একরামুজ্জামান নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, বাজার যেন মধ্যবিত্তদের জন্যও আতঙ্কের জায়গা হয়ে গেছে। মাসের ফর্দ কাটছাঁট করতে করতে এমন অবস্থায় ঠেকেছে যা না হলেই চলে না। তারপরও কুলানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ভালো খাবার ছেড়ে সস্তা খাবার খুঁজতে হচ্ছে এখন। আমিষ প্রোটিন ভিটামিন এগুলো কী খাওয়া না খাওয়া দরকার, সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হচ্ছে শুরু দামের চোটে। বিলাসী পণ্য কেনা বাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এখন কেনা যাচ্ছে না।