নাটোর জেলা প্রতিনিধি :
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল সাড়ে সাতটার কিছু আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুল কুদ্দুসের ব্যক্তিগত সহকারী ইব্রাহীম। তিনি জানান, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শনিবার সন্ধ্যায় সংসদ আব্দুল কুদ্দুসকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়। অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
জানা যায়, চলতি বছর পরিবারসহ দ্বিতীয়বারের মতো পবিত্র হজ পালন করে সম্প্রতি দেশে ফেরেন তিনি। আগস্ট মাসজুড়ে প্রতিদিনই একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শারীরিকভাবে ক্লান্ত ছিলেন তিনি। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি নিয়মিত থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিজ বাসভবনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট নিয়ে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শ্বাসকষ্ট কন্ট্রোল করা কঠিন হচ্ছিল এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছিল। ফলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই বুধবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তিনি সাতবার এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচবার সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে বর্তমান মেয়াদে নিযুক্ত ছিলেন।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে নাটোর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্যতাই নয়, দেশ হারালো একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সংসদ সদস্যকে। যিনি এ অঞ্চলের শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এছাড়া নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিশুল, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলসহ নানা শ্রেণির ও পেশার মানুষ তার এ মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
আব্দুল কুদ্দুস ১৯৪৬ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাটোর-৪ আসন থেকে পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে তিনি মৎস্য ও পশু সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল কুদ্দুসের পৈতৃক বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত বিলসা গ্রামে। তিনি রাজশাহী কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন এবং বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।