Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীর মেঘনায় কচুরিপানা চরাঞ্চলবাসীর ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নরসিংদীর মেঘনা নদী কচুরিপানার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পুরো নদী কচুরিপানার দখলে থাকায় নৌ চলাচলে বিঘ্নসহ প্রায়ই বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে। ফলে দূর্ভোগসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জেলার চরাঞ্চলবাসী। এ অবস্থায় নরসিংদী শহরের সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। ফলে মেঘনার এই কচুরিপানা চরাঞ্চলবাসীর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে দেখা যায়, নরসিংদী থানাঘাট হতে করিমপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীপথ ভাসমান কচুরিপানায় দখল করে নিয়েছে। এতে নরসিংদীর সাথে চরাঞ্চলের নৌ পথে যোগাযোগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ফলে গত বেশ কয়েকদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলবাসী।

ভুক্তভোগী চরাঞ্চলবাসী জানান, চরবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য, ঔষধ, কাচাঁমালের সিংহভাগই আসে নরসিংদী শহর থেকে। নৌকাযোগে এসব আনতে মারাত্মক দুর্ভোগের স্বীকার পোহাতে হচ্ছে তাদের। নদীর বুক জুড়ে ভাসমান কচুরিপানা থাকায় লঞ্চ, স্টিমার, ইঞ্চিন চালিত নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ইতোমধ্যে নরসিংদী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি কয়েক’শ স্পিডবোর্ট প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় লোকজন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। আগে যেসব স্থানে যেতে সময় লাগত এক ঘন্টা এখন সেখানে যেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।

জানা যায়, ভাসমান এসব কচুরিপানার উৎস হচ্ছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ মাছের ঘের। আর ওইসব ঘেরের কচুরিপানা বাতাসে এসে জমা হয় নরসিংদী নদীবন্দরে। প্রতি বছরই এ সময়ে নরসিংদীর মেঘনা নদী দখল করে নেয় ভাসমান এই কচুরিপানা। যার ফলে প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় চরাঞ্চলসহ নৌপথে যাতায়াতকারীদের।

ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি হানিফা জানান, কচুরিপানার কারণে ঠিকভাবে নৌকা চালাতে পারে না তারা । একটু পরপরই ভাসমান কচুরিপানার স্তুপে আটকে যায় নৌকা। এ সময় লগি বৈঠা দিয়ে আটকে যাওয়া নৌকাকে মুক্ত করতে হয়। তাছাড়া যে গতিতে নৌকা চালায় তারা কচুরিপানার কারণে সেই স্বাভাবিক গতিতে চলাতে পারে না তারা। এতে গন্তব্যে পৌঁছুতে নিদ্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দুই তিন গুণ বেশী সময় লেগে যায়।

সোরহাব নামে অপর একজন মাঝি বলেন, ইদানিং কচুরিপানার পরিমাণ এতোটাই বেড়েছে যে গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা নরসিংদী যেতে পারি না অর্ধেক পথে যাত্রি নামিয়ে দিতে হয়। গত এক সাপ্তাহ ধরে বুদিয়ামারা মোড় এলাকা থেকে নাগরিয়াকান্দি ব্রিজ প্রায় দুই কিলোমিটার মধ্েয নৌকা চলাচল অনেকটা বন্ধ রয়েছে। দুই একটা নৌকা নরসিংদী শহরে কষ্টে করে ঘাট পর্যন্ত ৫/৭ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে একঘন্টারও বেশী।

স্পিডবোর্ট চালক সুমন মিয়া বলেন, বর্তমানে নদীতে কচুরিপানা এতো বেড়েছে যার ফলে তাদের বোট চালানোই প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে চরাঞ্চলের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কচুরিপানার ছবি ও ভিডিও, পোস্ট করে বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। তাদের এ প্রচেষ্টা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি-গোচর হয়েছে কি-না তা তারা জানে না। আর যদি দৃষ্টি-গোচর হয়েও থাকে তবে কেন চরাঞ্চলবাসীরা এখনো দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, কেন এখনও এগিয়ে আসছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা তাদের জানা নেই।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র সংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাছের ঘের থেকে এই কচুরিপানা আসছে। এর জন্য আমরা অবৈধ দখলদার ও অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেবো। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন বলে বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

নরসিংদীর মেঘনায় কচুরিপানা চরাঞ্চলবাসীর ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

নরসিংদীর মেঘনা নদী কচুরিপানার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পুরো নদী কচুরিপানার দখলে থাকায় নৌ চলাচলে বিঘ্নসহ প্রায়ই বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে। ফলে দূর্ভোগসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জেলার চরাঞ্চলবাসী। এ অবস্থায় নরসিংদী শহরের সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। ফলে মেঘনার এই কচুরিপানা চরাঞ্চলবাসীর দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে দেখা যায়, নরসিংদী থানাঘাট হতে করিমপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীপথ ভাসমান কচুরিপানায় দখল করে নিয়েছে। এতে নরসিংদীর সাথে চরাঞ্চলের নৌ পথে যোগাযোগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ফলে গত বেশ কয়েকদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলবাসী।

ভুক্তভোগী চরাঞ্চলবাসী জানান, চরবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য, ঔষধ, কাচাঁমালের সিংহভাগই আসে নরসিংদী শহর থেকে। নৌকাযোগে এসব আনতে মারাত্মক দুর্ভোগের স্বীকার পোহাতে হচ্ছে তাদের। নদীর বুক জুড়ে ভাসমান কচুরিপানা থাকায় লঞ্চ, স্টিমার, ইঞ্চিন চালিত নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ইতোমধ্যে নরসিংদী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারি কয়েক’শ স্পিডবোর্ট প্রায় বন্ধের পথে। এ অবস্থায় লোকজন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। আগে যেসব স্থানে যেতে সময় লাগত এক ঘন্টা এখন সেখানে যেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।

জানা যায়, ভাসমান এসব কচুরিপানার উৎস হচ্ছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ মাছের ঘের। আর ওইসব ঘেরের কচুরিপানা বাতাসে এসে জমা হয় নরসিংদী নদীবন্দরে। প্রতি বছরই এ সময়ে নরসিংদীর মেঘনা নদী দখল করে নেয় ভাসমান এই কচুরিপানা। যার ফলে প্রতিবছরই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় চরাঞ্চলসহ নৌপথে যাতায়াতকারীদের।

ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি হানিফা জানান, কচুরিপানার কারণে ঠিকভাবে নৌকা চালাতে পারে না তারা । একটু পরপরই ভাসমান কচুরিপানার স্তুপে আটকে যায় নৌকা। এ সময় লগি বৈঠা দিয়ে আটকে যাওয়া নৌকাকে মুক্ত করতে হয়। তাছাড়া যে গতিতে নৌকা চালায় তারা কচুরিপানার কারণে সেই স্বাভাবিক গতিতে চলাতে পারে না তারা। এতে গন্তব্যে পৌঁছুতে নিদ্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দুই তিন গুণ বেশী সময় লেগে যায়।

সোরহাব নামে অপর একজন মাঝি বলেন, ইদানিং কচুরিপানার পরিমাণ এতোটাই বেড়েছে যে গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা নরসিংদী যেতে পারি না অর্ধেক পথে যাত্রি নামিয়ে দিতে হয়। গত এক সাপ্তাহ ধরে বুদিয়ামারা মোড় এলাকা থেকে নাগরিয়াকান্দি ব্রিজ প্রায় দুই কিলোমিটার মধ্েয নৌকা চলাচল অনেকটা বন্ধ রয়েছে। দুই একটা নৌকা নরসিংদী শহরে কষ্টে করে ঘাট পর্যন্ত ৫/৭ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে একঘন্টারও বেশী।

স্পিডবোর্ট চালক সুমন মিয়া বলেন, বর্তমানে নদীতে কচুরিপানা এতো বেড়েছে যার ফলে তাদের বোট চালানোই প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

এ ব্যাপারে চরাঞ্চলের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কচুরিপানার ছবি ও ভিডিও, পোস্ট করে বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে। তাদের এ প্রচেষ্টা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি-গোচর হয়েছে কি-না তা তারা জানে না। আর যদি দৃষ্টি-গোচর হয়েও থাকে তবে কেন চরাঞ্চলবাসীরা এখনো দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, কেন এখনও এগিয়ে আসছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা তাদের জানা নেই।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এ বিষয়ে নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র সংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাছের ঘের থেকে এই কচুরিপানা আসছে। এর জন্য আমরা অবৈধ দখলদার ও অবৈধ মাছের ঘের উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেবো। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন বলে বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করেছেন।