Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন পাঠ্যবইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ‘ভুল’

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখন পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তার এই মৃত্যুতে কোটা আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়, শেষে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের।

গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তার মৃত্যুর তারিখ ভুলভাবে লেখা হয়েছে মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা এই ভুলের কথা স্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা দ্রুতই এ বিষয়ে সংশোধনী দেবেন।

এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে নানাভাবে উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা। গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু।

নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘গ্রাফিতি’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এর শুরুতে রাজধানীর মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা ‘হামাক বেটাক মারলু কেনে?’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদী লেখা যুক্ত রয়েছে। এর পরের পৃষ্ঠায় এই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের কথা রয়েছে। বইয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জুলাই। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১৬ জুলাই।

নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ নামের পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। এই বইয়ে অবশ্য ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো আবু সাঈদের শহীদ হওয়া। তার মৃত্যুর আগের একটি ভিডিও সারা দেশে আলোড়ন তোলে। অথচ তার মৃত্যুর তারিখই যদি ভুল হয় তাহলে মনে হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক ঠিকমতো পরিমার্জন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলেও ওই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে তা ঠিক আছে। এ ভুলগুলো অনলাইন কপিতে আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি। তবে মুদ্রণ হওয়া বইগুলো যেগুলো চলে গেছে, সেগুলোর জন্য সংশোধন কপি পাঠানো হবে। আর যেসব বই ছাপা হয়নি, সেখানে সংশোধন করে ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। এনসিটিবি ৪১ জন বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা।

এনসিটিবি সূত্রমতে, পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে মোট আটটি কনটেন্ট বা বিষয় স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা ছবি ও গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাসে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

নতুন পাঠ্যবইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ‘ভুল’

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, ঠিক তখন পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। তার এই মৃত্যুতে কোটা আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়, শেষে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের।

গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তার মৃত্যুর তারিখ ভুলভাবে লেখা হয়েছে মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা এই ভুলের কথা স্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা দ্রুতই এ বিষয়ে সংশোধনী দেবেন।

এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের নতুন পাঠ্যবইয়ে নানাভাবে উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা। গল্প-কবিতা, সংকলন এবং ছবি ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু।

নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘গ্রাফিতি’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এর শুরুতে রাজধানীর মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা ‘হামাক বেটাক মারলু কেনে?’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদী লেখা যুক্ত রয়েছে। এর পরের পৃষ্ঠায় এই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের কথা রয়েছে। বইয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ জুলাই। প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১৬ জুলাই।

নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ নামের পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। এই বইয়ে অবশ্য ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদের বুক চিতিয়ে পুলিশের গুলির সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম হলো আবু সাঈদের শহীদ হওয়া। তার মৃত্যুর আগের একটি ভিডিও সারা দেশে আলোড়ন তোলে। অথচ তার মৃত্যুর তারিখই যদি ভুল হয় তাহলে মনে হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তক ঠিকমতো পরিমার্জন হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হলেও ওই শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে তা ঠিক আছে। এ ভুলগুলো অনলাইন কপিতে আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি। তবে মুদ্রণ হওয়া বইগুলো যেগুলো চলে গেছে, সেগুলোর জন্য সংশোধন কপি পাঠানো হবে। আর যেসব বই ছাপা হয়নি, সেখানে সংশোধন করে ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে। এনসিটিবি ৪১ জন বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা।

এনসিটিবি সূত্রমতে, পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে মোট আটটি কনটেন্ট বা বিষয় স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা ছবি ও গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাসে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।