গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার সকালে নৌ পথে নতুন করে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের প্রতিহত করে। তারা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন সে ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক আছে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা সে রকমই।
আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, গতকাল সোমবার দুপুরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ইস্যু নিয়েই কাজ করছি। আগামীকাল আমি নিজে কক্সবাজার পরিদর্শন যাব। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ধৈর্য্য ধারণ করে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীও ধৈর্য্য ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
নবনিযুক্ত বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাসহ অন্যান্য বাহিনীর ২৬৪ জন এসেছে মিয়ানমার থেকে। ২৬৪ জনকেই আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন আহত ছিল। তাঁদের মধ্যে আটজন গুরতর আহত ছিল, তাঁদের মধ্যে চারজনকে কক্সবাজার ও চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের বিজিবির পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই সেটা হবে।
গতকাল সোমবার দুইজনের মৃত্যুর বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রোটেস্ট নোট দিয়েছি। আজ সকালে মিয়ানমারের ডিএ আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই ব্যবস্থার আশু সমাধান করার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন, ৬৫ জন রোহিঙ্গা নৌকায় করে পানি পথে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। সেখানে টেকনাফ বিজিবি তাদের প্রতিহত করে পুশব্যাক করার প্রসেস চলমান রয়েছে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ভেতরে ঢুকতে দেব না।
সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সরকারি পরিকল্পনা সম্পর্কে বিজিবি ডিজি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আশ্রিতদের প্রত্যাবর্তন বা ফেরানোর বিষয়ে কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। মিয়ানমার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। তারাও প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে নোট নিয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই তাদের প্রত্যাবর্তন করানো হবে।
বিজিবি ডিজি বলেন, একইসঙ্গে দুই দেশের দুই সীমান্ত বাহিনীর মতো যোগাযোগ হচ্ছে। সীমান্তবর্তী পরিস্থিতি আপনারা জানেন। মিয়ানমারে গোলাগুলির মধ্যে কিছু শেল এসে বাংলাদেশে পড়ছে। তাতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গতকাল এক রোহিঙ্গা নাগরিক ও একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এই মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রোটেস্ট নোট দিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি এবং আজকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বড় মিটিং হচ্ছে। আর আমি আগামীকাল সরেজমিনে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাব।
তিনি আরও বলেন, আজকে মিয়ানমারের ডিএ (ডিফেন্স অ্যাটাচ) আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। সবদিক এঙ্গেজ করে কীভাবে এর আশু সমাধান করা যায়, সে চেষ্টা আমরা করছি।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আজকে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোটের মাধ্যমে নদী পথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। আমাদের টেকনাফ বিজিবি তাদের প্রতিহত করেছে। তাদের পুশব্যাক করার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আর প্রবেশ করতে দেব না। এভাবে বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় বিজিবি কাজ করে যাচ্ছে।