চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি কোনো নগরপিতা হিসেবে নয়, নগরসেবক হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। এই শহরে ৭০ লাখ সব ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও ভাষার মানুষ আছেন। আমি সবার পাশে থেকে সেবক হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম আসার পর নগরের পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. শাহাদাত বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চসিকের নতুন মেয়র বলেন, ভাইয়েরা-বোনেরা আপনারা গত ১৬ বছর ঘরে থাকতে পারেননি। পরিবারের খোঁজ নিতে পারেননি। বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে পারেননি, বাজার করার টাকা ছিল না। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটিয়েছেন। আপনাদের এই অসহায়ত্ব আমরা দেখেছি। আপনাদের এই ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। আমাদের শত শত নেতাকর্মী খুন-গুমের শিকার হয়েছেন। এক লাখ মামলায় ৬০ লাখ আসামি হয়েছেন। তবুও আদর্শচ্যুত হননি। এটাই আমাদের শক্তি।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আইসিটি মামলার বিরুদ্ধে গিয়েও কথা বলার স্বাধীনতা না থাকার পরও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা এবং তাদের ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরেছেন।
নগরবাসীর উদ্দেশে ডা. শাহাদাত বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান। এই শহর আমার একার নয়। ৭০ লাখ মানুষের। আসুন, সবাই মিলে এ শহরকে ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি, হেলথি সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলি। আমাকে একটু সময় দিন, আমি কথা দিয়েছি। তা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
ডা. শাহাদাত তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর নগরের হযরত শাহ আমানত (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন চসিকের নতুন মেয়র। এরপর বিকালে লালদীঘি পাড়স্থ চসিক লাইব্রেরি ভবনের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পরে একই স্থানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডা. শাহাদাত হোসেন। সন্ধ্যায় টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন তিনি।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত ধানের শিষ প্রতীকে পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগের নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক শাহাদাত।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই মামলার রায়ে গত ১ অক্টোবর শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে রোববার সকালে সচিবালয়ে শপথ নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। একই সঙ্গে কাউন্সিলর না থাকায় করপোরেশন পরিচালনার জন্য ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন।