নিজস্ব প্রতিবেদক :
আমরা আন্দোলনে যেতে চাইনি। এই সরকার আমাদের বাধ্য করেছে আন্দোলন করতে। এই আন্দোলনে নগর ভবন অচলাবস্থার জন্য এই সরকার, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগরভবনে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজপথে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ইশরাক হোসেন বলেন, আপনারা যদি মনে করেন যে, এই আন্দোলনকে অকার্য করে যাবেন, তাহলে আবারও এই আন্দোলন নগর ভবনের গন্ডি পেরিয়ে রাজপথে অবস্থান করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদেরকে আবারও বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, যত দ্রুত সম্ভব আপনারা এই আন্দোলনের সুরাহা করুন। কেন আপনারা কাল বিলম্ব করছেন, কিসের ভিত্তিতে কালক্ষেপণ করছেন। কার প্ররোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আপনারা পদক্ষেপ নিন। আমাদেরকে মুক্তি দেন, জনগণকে মুক্তি দেন এবং আপনারাও শান্তিতে থাকুন। এ আন্দোলন থেকে পেছনে আসার কোনো রাস্তা আপনারা আর খোলা রাখেননি। নগর ভবনের এই অচলাবস্থার জন্য অন্তবর্তীকালিন সরকার এবং উপদেষ্টারা দায়ী।
ড. ইউনুসকে অনুরোধ জানিয়ে ইশরাক বলেন, আপনি দয়া করে এই বলেন বিষয়টি নজরে আনুন। এটার একটা যৌক্তিক সুরাহা করার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে, ঢাকা বাসীকে, জনগণকে মুক্তি দেন।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার পছন্দের ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি দেশের জনগণের ম্যান্ডেটকে অবজ্ঞা করেছেন। পাশাপাশি গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন, যা প্রতারণার শামিল।
এসময় উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করে ইশরাক বলেন, আসিফ মাহমুদ বয়সে খুবই তরুন। সামনে তাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কাজেই জনগনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরন, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ তাঁর নিকট হতে কাম্য। অসত্য তথ্য দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করা তাঁর কাজ নয়। কারণ এতো অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে যেসকল জনগণ তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য হতে বিচ্যুত হননি, তাদের তিনি বিভ্রান্ত করতে পারবেন না। অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্ঠা পদে আসিফ মাহমুদের বহাল থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবী করছি।
তিনিবলেন, সোমবার (১৬ জুন) স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শপথ পড়ানো যায়নি। তার এ কথা সত্য হলে ভবিষ্যতে কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি আর শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশিত হলে পরাজিত প্রার্থী অথবা যে কোন একজন নাগরিককে সজীব ভূইয়ার মত একজন ব্যক্তি ইন্ধন দিয়ে শপথ না পড়ানোর জন্য মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট মামলা দায়ের করবে। আর ঐ রিট মামলা ৩০ দিন অনিষ্পত্তি থাকলে, গেজেটে উল্লিখিত ৩০ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এতে ভবিষ্যতে কোন জনপ্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।
ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল বিগত ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল ও পরবর্তী সময়ে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গেজেট বাতিল করে আমাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১০ দিনের আমাকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ১০ দিনের মধ্যে ২৭ এপ্রিল সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, সংশোধিত গেজেট পেয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছুই করণীয় নেই। তবে শপথ অনুষ্ঠানকে বিলম্ব করার জন্য ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল দায়ের করবে কিনা, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আরজি সংশোধনের সুযোগ নেই ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তুলে কাল বিলম্ব করে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে বিরত আছে।