Dhaka বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসস্তুপ ৩২ নম্বর, এখনো চলছে ভাঙার কাজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৯৫ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে শুরু হওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার কাজ গড়ালো দ্বিতীয় দিনে। বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপ ঘিরে অবস্থান করছে। তাদেরকে দলবদ্ধ হয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে উৎসব করতে দেখা গেছে। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভাঙার কাজে ব্যবহার করা বুলডোজরটি সরিয়ে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অনেককে বাড়ি ভাঙার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের হাতে হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দেখা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ভাঙার কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আবার অন্যদিকে ভাঙা দেয়ালে বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ রঙ-তুলি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখে দিচ্ছেন ।

সীমানা প্রাচীরসহ তিনতলা বাড়ির সামনের অনেকটাই এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটিতে রাতে লাগানো আগুন সকালে আর জ্বলতে দেখা যায়নি। উপরের কয়েকটি কক্ষ থেকে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোট-বড় সব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

সকাল থেকে শেখ মুজিবের ভাঙা বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। এক দল মানুষকে বাড়িটি থেকে দরজা-জানালা, ইট, লোহা, পাইপ, বইসহ অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে যেমন পারছে বাড়ির ভেতর থেকে জিনিসপত্র খোঁজে খোঁজে নিয়ে যাচ্ছে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির ভাঙা অংশ থেকে হেকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। কেউ কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে কনক্রিট ভেঙে সংগ্রহ করছে রড। বাড়ির ভেতরে পড়ে থাকা একটি পোড়া গাড়ি থেকে ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে কয়েজনকে। পরে যানবাহনে করে এসব মালামাল তাদেরকে সরাতে দেখা গেছে।

এ সময় ফয়সাল করীম নামের একজন উৎসুক জনতা বলেন, এই বাড়িটিকে কেন্দ্র করেই অর্থাৎ কেবলা বানিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। আজ এটা ভেঙে ফেলা মূলত জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই এই জায়গায় একটা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হোক।

তার কথার মাঝখানেই কথা বলেন অন্য একজন। তিনি বলেন, বাড়িটি ভেঙে আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক। যাতে তারা এখানে বসবাস করতে পারে।

ভাঙা বাড়ি থেকে লোহার জিনিসপত্র খুলে নেওয়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মূলত ভাঙারি দোকানের লোকজন ভবনগুলো থেকে লোহার অবকাঠামো খুলতে ভাঙচুর করায় এই আওয়াজ আসছে।

অন্যদিকে বর্তমানে বাড়ির বাকি অর্ধেক ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে। একটি এক্সেভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এখনো আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যার পর ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচি দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশমুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাতেই বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়।

এরআগে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন’ নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর পাওয়ার পরপরই বিকালে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল উত্তেজিত জনতা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ধ্বংসস্তুপ ৩২ নম্বর, এখনো চলছে ভাঙার কাজ

প্রকাশের সময় : ০১:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে শুরু হওয়া ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার কাজ গড়ালো দ্বিতীয় দিনে। বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ ধ্বংসস্তূপ ঘিরে অবস্থান করছে। তাদেরকে দলবদ্ধ হয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে উৎসব করতে দেখা গেছে। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভাঙার কাজে ব্যবহার করা বুলডোজরটি সরিয়ে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অনেককে বাড়ি ভাঙার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের হাতে হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন হালকা যন্ত্র দেখা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে ভাঙার কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আবার অন্যদিকে ভাঙা দেয়ালে বিক্ষুব্ধদের কেউ কেউ রঙ-তুলি দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান লিখে দিচ্ছেন ।

সীমানা প্রাচীরসহ তিনতলা বাড়ির সামনের অনেকটাই এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনটিতে রাতে লাগানো আগুন সকালে আর জ্বলতে দেখা যায়নি। উপরের কয়েকটি কক্ষ থেকে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বাড়ির আঙিনায় থাকা ছোট-বড় সব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।

সকাল থেকে শেখ মুজিবের ভাঙা বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। এক দল মানুষকে বাড়িটি থেকে দরজা-জানালা, ইট, লোহা, পাইপ, বইসহ অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে যেমন পারছে বাড়ির ভেতর থেকে জিনিসপত্র খোঁজে খোঁজে নিয়ে যাচ্ছে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির ভাঙা অংশ থেকে হেকসো ব্লেড দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি। কেউ কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে কনক্রিট ভেঙে সংগ্রহ করছে রড। বাড়ির ভেতরে পড়ে থাকা একটি পোড়া গাড়ি থেকে ইঞ্জিন খুলে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে কয়েজনকে। পরে যানবাহনে করে এসব মালামাল তাদেরকে সরাতে দেখা গেছে।

এ সময় ফয়সাল করীম নামের একজন উৎসুক জনতা বলেন, এই বাড়িটিকে কেন্দ্র করেই অর্থাৎ কেবলা বানিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। আজ এটা ভেঙে ফেলা মূলত জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই এই জায়গায় একটা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হোক।

তার কথার মাঝখানেই কথা বলেন অন্য একজন। তিনি বলেন, বাড়িটি ভেঙে আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক। যাতে তারা এখানে বসবাস করতে পারে।

ভাঙা বাড়ি থেকে লোহার জিনিসপত্র খুলে নেওয়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মূলত ভাঙারি দোকানের লোকজন ভবনগুলো থেকে লোহার অবকাঠামো খুলতে ভাঙচুর করায় এই আওয়াজ আসছে।

অন্যদিকে বর্তমানে বাড়ির বাকি অর্ধেক ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে। একটি এক্সেভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এখনো আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার সন্ধ্যার পর ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচি দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাসার সামনে এসে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়িটিতে প্রবেশ করেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড়ও বাড়তে থাকে। সে সময় বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রবেশমুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে রাতেই বাড়ির সামনে বুলডোজার আনা হয়।

এরআগে, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টার দিকে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ‘ছাত্র-জনতা আন্দোলন’ নামে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে পোস্ট করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর পাওয়ার পরপরই বিকালে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল উত্তেজিত জনতা।