Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধার্মিক সহজ-সরল ছিলেন পিটিয়ে মারা রংপুরের জুয়েল

  • রংপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০
  • ১৯৭ জন দেখেছেন

সংগৃহীত ছবি

আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, কোরআন-হাদিস পড়তো। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিতো। করোনাভাইরাসের সময় কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। কথাগুলো বলেন নিহত জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব থেকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া রংপুরের সেই শহিদুন্নবী জুয়েল অত্যন্ত ধার্মিক ও সহজ-সরল ছিলেন। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রংপুর নগরীর শালবনে তার বাসভবনে সরেজমিনে গিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।

শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পাস করেছে। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় তার একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতেন নিয়মিত।

জুয়েলের বোন হাছনা আক্তার নিতি বলেন, ২০১৬ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের গ্রন্থাগারিক পদে ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচণ্ড রকমের মানসিক ধাক্কা পায়। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনযোগ দেয়। সে নিয়মিত কোরআন-হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতো।

তিনি বলেন, অনেক সময় আসরের নামাজ পড়ে মসজিদেই কোরআন-হাদিস পড়ে এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতো। সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে না। যারা গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই।

আমি শুনেছি তার বন্ধুসহ ওষুধ আনতে গিয়ে বুড়িমারীতে মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে সেখানের ওয়ালের তাকে রাখা কোরআন নিতে যায়। এ সময় অসাবধানতাবশত কোরআন ও হাদিসের বই পায়ের কাছে পড়ে যায়। এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

জুয়েলের বন্ধু রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, আমরা প্রায় ৪০ বছর ধরে একই এলাকায় থাকি। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। একসঙ্গে খেলাধুলাসহ নানা কাজ করতাম। সে আমাকে সবসময় তার বিষয়গুলো জানাতো।

নামাজের সময় হলে সে নামাজের জন্য ছুটে যেত। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকতো। ষড়যন্ত্রে চাকরিটা চলে যাওয়ার পর সে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলো। ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিলো।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনরা এভাবে গুজব ছড়িয়ে নৃশংসভাবে জুয়েলকে হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করছেন। শুক্রবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসী রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন।

এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকালে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকালে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।

নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সাথে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়।

এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে।

এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

আরও পড়ুন : কোরআন অবমাননার গুজবের জেরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পরবর্তীতে নিহত জুয়েলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তার পরিচয় শনাক্ত হয়।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীর এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে।

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, পুলিশের ওপর হামলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের দায়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব থেকে জুয়েলকে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ধার্মিক সহজ-সরল ছিলেন পিটিয়ে মারা রংপুরের জুয়েল

প্রকাশের সময় : ০৪:৪১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর ২০২০

আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, কোরআন-হাদিস পড়তো। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিতো। করোনাভাইরাসের সময় কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। কথাগুলো বলেন নিহত জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব থেকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া রংপুরের সেই শহিদুন্নবী জুয়েল অত্যন্ত ধার্মিক ও সহজ-সরল ছিলেন। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রংপুর নগরীর শালবনে তার বাসভবনে সরেজমিনে গিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।

শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পাস করেছে। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় তার একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতেন নিয়মিত।

জুয়েলের বোন হাছনা আক্তার নিতি বলেন, ২০১৬ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের গ্রন্থাগারিক পদে ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচণ্ড রকমের মানসিক ধাক্কা পায়। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনযোগ দেয়। সে নিয়মিত কোরআন-হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতো।

তিনি বলেন, অনেক সময় আসরের নামাজ পড়ে মসজিদেই কোরআন-হাদিস পড়ে এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতো। সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে না। যারা গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই।

আমি শুনেছি তার বন্ধুসহ ওষুধ আনতে গিয়ে বুড়িমারীতে মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে সেখানের ওয়ালের তাকে রাখা কোরআন নিতে যায়। এ সময় অসাবধানতাবশত কোরআন ও হাদিসের বই পায়ের কাছে পড়ে যায়। এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

জুয়েলের বন্ধু রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, আমরা প্রায় ৪০ বছর ধরে একই এলাকায় থাকি। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। একসঙ্গে খেলাধুলাসহ নানা কাজ করতাম। সে আমাকে সবসময় তার বিষয়গুলো জানাতো।

নামাজের সময় হলে সে নামাজের জন্য ছুটে যেত। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকতো। ষড়যন্ত্রে চাকরিটা চলে যাওয়ার পর সে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলো। ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিলো।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনরা এভাবে গুজব ছড়িয়ে নৃশংসভাবে জুয়েলকে হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করছেন। শুক্রবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসী রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন।

এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকালে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকালে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।

নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সাথে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়।

এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে।

এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

আরও পড়ুন : কোরআন অবমাননার গুজবের জেরে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

পরবর্তীতে নিহত জুয়েলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তার পরিচয় শনাক্ত হয়।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীর এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অপরদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকেও ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে।

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার, পুলিশের ওপর হামলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের দায়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব থেকে জুয়েলকে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।