নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্নীতির মামলায় মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখার সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) ও প্রিভিলেজ সেন্টারের সেন্টার ম্যানেজার জাহিদ সারোয়ারকে দুর্নীতির মামলায় পৃথক তিন ধারায় ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাঁর স্ত্রী ফারহানা হাবিবকে পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ রায় দেন। দুই জনকে প্রায় ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম মিঠু এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাইফুল ইসলাম মিঠু জানান, বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে জাহিদ সারোয়ারকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাঁকে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতির দায়ে তাঁকে আরও সাত বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অর্থপাচারের দায়ে তাকে আরও সাত বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে ফারহানা হাবিবকে তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাঁকে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থপাচারের দায়ে তাঁকে আরও চার বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বেঞ্চ সহকারী সাইফুল ইসলাম আরও জানান, জাহিদ সারোয়ারকে অর্থপাচারের অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন অর্থাৎ ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার এবং তার স্ত্রী ফারহানা হাবিবকে ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ডের ৫০ শতাংশ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। বাকি টাকা পাবে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখা।
আসামিদের দেওয়া সাজা পৃথক পৃথকভাবে কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত। সে ক্ষেত্রে জাহিদ সারোয়ারকে ২৪ বছর, ফারহানা হাবিবকে সাত বছরের সাজা খাটতে হবে। আসামিরা পলাতক রয়েছেন। আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জাহিদ সারোয়ার ও ফারহানা হাবিব পরস্পর যোগসাজশে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বনানী শাখার প্রিভিলেজ গ্রাহক ফেরদৌসী আমান নামে এক জনের ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার আশ্রয়ে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে হিসাবধারীর স্বাক্ষর জাল করেন। জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে এসএমএস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য গ্রাহকের নম্বর পরিবর্তন করে নিজের নম্বরটি পরিবর্তিত নম্বর হিসেবে ব্যবহার করে। ফেরদৌসী জামানের স্বাক্ষর জাল করে চারটি চেক বই সংগ্রহ করে তাকে তিনটি চেক বই না দিয়ে নিজে রেখে দেন। তিনটি চেক বইয়ের ৬০টি চেকের পাতায় ফেরদৌসী জামানের স্বাক্ষর জাল করে এবং ১৬টি চেকে গ্রাহকের বেয়ারার ইশতিয়াক হোসেন তালুকদারের স্বাক্ষর জাল করে চার কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। আত্মসাৎ টাকা হতে প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের বসুন্ধরা শাখায় তার স্ত্রী ফারহানা হাবিবের মালিকানাধীন আশা ক্রিয়েশনের হিসাব নম্বরে জমা করেন। ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক শফি উল্লাহ ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর মামলাটি করেন।
মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট জমা দেন শফি উল্লাহ। এর পর চার্জগঠন করে দুই জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।