মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি :
দুর্নীতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি যত কমবে, সমাজে বৈষম্য তত কমবে।
রোববার (১৮ মে) সকালে মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুদকের ১৭৫তম গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, মিথ্যাচার থেকে দুর্নীতির শুরু। আমাদের জনবল খুব কম। এখন দাবি ওঠে জনবল বাড়ানোর। জনবল না বাড়ালে কীভাবে আমরা দুর্নীতি কমাবো। আমাদের জনবল যত বাড়বে, আমাদের বেতন তত বাড়বে, আপনাদের ট্যাক্সও বাড়বে। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে বড় করবো না দুর্নীতি কমাবো? দুর্নীতি যত কমবে, আমাদের বেতন তত কমে আসবে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজকের গণশুনানির উদ্দেশ্য কোনোভাবেই কাউকে খাটো করা বা বড় করা নয়। সেটা অস্বীকার আমরা করি না আমাদের মধ্যে কমবেশি দুর্নীতি রয়েছে। ঘুষ, জ্ঞাত-অজ্ঞাতে, কেউ দ্রব্যে গ্রহণ করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির দুটি দিক রয়েছে। একটি ডিমান্ড সাইট অপরটি সাপ্লাই সাইট। ডিমান্ড সাইট বলবে আমাকে কিছু ঘুষ দিতে হবে আর সাপ্লাই সাইট বলবে আমি কিছু ঘুষ দেব আমাকে কাজটা করে দেন। সবার আগে সাপ্লাই সাইটটা বন্ধ করতে হবে। সাপ্লাই সাইট বন্ধ হয়ে গেলে ডিমান্ড সাইট বন্ধ না হয়ে কোনো উপায় নেই। আর দুর্নীতি বৈষম্যের সৃষ্টি করে। দুর্নীতি যত কমবে বৈষম্য তত কমবে।
আবদুল মোমেন বলেন, আপনার অফিসে, আমার অফিসে দুই একজন দুর্নীতিবাজ যে নেই তা আমরা অস্বীকার করব না। সেই দুর্নীতিবাজদের কারণে আমরা সেবাগ্রহীতার কাছে নিন্দনীয় হবো- বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। আর প্রতিটি অফিসে সপ্তাহে না হলেও মাসে একবার গণশুনানির আয়োজন করেন। এই গণশুনানির মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের সমাজে মিথ্যাচার দিয়ে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে দুর্নীতি ঢুকে যায়। আমাদের কমিশনের জনবল অনেক কম। আমাদের জনবল বাড়লে সেবা বাড়বে। আমরা অস্বীকার করি না যে আমাদের মধ্যে কমবেশি কিছুটা দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির সাপ্লাই সাইট আগে বন্ধ করতে হবে। সাপ্লাই সাইট বন্ধ হলে ডিমান্ড সাইট এমনিতেই বন্ধ হবে।
দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেমন একটি বাহিনীর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব হয়েছিল, তেমনি গত ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু ভুয়া সমন্বয়ক ও ভুয়া দুদক চেয়ারম্যান পরিচয়ে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছে। আমরা এসব ভুয়া পরিচয়ধারীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সমাজে দুর্নীতির গোড়াপত্তন হয় মিথ্যাচারের মাধ্যমে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করে। এই অবস্থার পরিবর্তনে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
গণশুনানির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, এই আয়োজন কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সচেতনতা সৃষ্টি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। আমরা চাই, মৌলভীবাজার জেলাকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হোক। প্রতি মাসে প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি গণশুনানি হলে দুর্নীতির প্রবণতা অনেকটা কমে যাবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি হলফনামায় যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তার সঙ্গে বাস্তবের গড়মিল পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে তদন্ত কাজ করছে দুদক। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার নির্বাচনি হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে বাস্তবের গড়মিল পাওয়া গেছে। আমরা সেই অনুযায়ী মামলা-মোকদ্দমার দিকে যাব।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার বোন ও সন্তানের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরায়েলের হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ, দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হুসাইন, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, দুদক সমন্বিত হবিগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এরশাদ মিয়া ও দুদক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রাফি মো. নাজমুস্ সা’দাৎ।