আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় অবরুদ্ধ গাজায় সোমবার আরও দুই জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা হলেন ইসরায়েলের নুরিত কুবার (৭৯) ও ইয়োচেভ লিফশিতজ (৮৫)। জিম্মি দশা থেকে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বিবৃতিতে হামাসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বলেছেন, ‘আমরা দুজনকে মুক্তি দিয়েছি। তবে এটা মনে রাখা দরকার যে গত শুক্রবার তাদের নিতে অস্বীকার করেছিল ইসরায়েল। স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও মানবিক খাতিরে আমরা এই দুই ইসরায়েলির মুক্তির সিদ্ধান্ত নিই।’
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে জানান, বন্দিদের মুক্তি করতে হামাসের সব ধরনের বাধা কাটিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল হয়ে কাজ করছে আইডিএফ ও নিরাপত্তা বাহিনী।
এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা রেডক্রস। সংস্থাটি জানিয়েছে, পরে তাদের তেল আবিবে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে তাদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার দুই মার্কিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। এরপর গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব ওঠে যুদ্ধবিরতির। তবে জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অন্তত ৫ হাজার রকেট ছুটে হামাস। পরে কাঁটাতারের বেষ্টনী ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে তুলে গাজায় নিয়ে যায় হামাস। তাদের হামলায় এক হাজার চারশ’র বেশি ইসরায়েলি নিহত হন। এর জেরে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। যা এখনও অব্যাহত। হামলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি উপত্যকাজুড়ে। হামলায় গত ১৬ দিনে ৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি বন্দীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে ফিলিস্তিনিরা। সোমবার রাতে হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলের দুই বন্দীর একজন ইয়োচেভেদ লিফসচিৎস এ কথা জনিয়েছেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। একটি হুইলচেয়ারে বসে থাকা দুর্বল চেহারার লিফসচিৎস (৮৫) বলেন, তাকে অপহরণের সময় লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। তবে গাজায় বন্দী থাকার সময় তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়েছে।
তেল আবিব হাসপাতালের সামনে এ ইসরায়েলি নারী বলেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আমাকে আটক করে নিয়ে আসার সময় মারধর করে। তারা আমার পাঁজর ভেঙে দেয়নি, তবে আমাকে আঘাত করেছে।
ইয়োচেভেদ লিফসচিৎস বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বন্দীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে ফিলিস্তিনিরা। তিনি বলেন, একজন ডাক্তার প্রতি দুই থেকে তিন দিনে তাকে এবং তার সহবন্দীদের সঙ্গে দেখা করতেন।
তিনি জানান, তার অপহরণকারীরা তাকে গাজায় নিয়ে যায়, তারপর তাকে মাকড়সার জালের মতো দেখতে সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্কে পৌঁছানোর জন্য ভেজা মাটিতে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে বাধ্য করে।
জানা গেছে যে ইয়োচেভেদ লিফসচিৎসের স্বামী এখনও জিম্মি রয়েছেন হামাসের হাতে।
এ ইসরায়েলি নারী বলেন, তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত লোকেরা (হামাস সদস্যরা) “আমাদের বলেছিল যে তারা এমন লোক যারা কুরআনে বিশ্বাস করে এবং আমাদের ক্ষতি করবে না।
লিফসচিৎস বলেন, তাকে এবং অন্য চারজনকে একটি ঘরে নেওয়ার পরে, তাদের সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করা হয়েছিল। তাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছিল এবং তারা ওষুধ-সহ চিকিৎসা সেবা পেয়েছিলেন।