স্পোর্টস ডেস্ক :
পেসারদের দাপটে প্রথম দিনেই দুই দলের একটি করে ইনিংস শেষ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনেও বজায় থাকল পেসের সেই ঝাঁজ, আর তাতেই নির্ধারিত হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জয়ের দেখা পেল ইংল্যান্ড। অজিদের ডেরায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর টেস্ট জিতল ইংলিশরা।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ফলাফল চলে এসেছে। অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ১৭৫ রানের লক্ষ্য বেন স্টোকসের দল তাড়া করেছে দ্রুতগতিতে, ৩২.২ ওভারেই পৌঁছে গেছে জয়ের বন্দরে। যদিও লক্ষ্যে পৌঁছাতে ৬ উইকেট হারাতে হয়েছে তাদের। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ইংল্যান্ড সর্বশেষ জিতেছিল ২০১১ সালে সিডনিতে। এরপর ১৬টি হার ও দুই টেস্ট ড্র করলেও জয়ের দেখা পায়নি তারা।
এই জয় মূলত সান্ত্বনা হয়েই থাকছে স্টোকসদের জন্য। পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ ইতোমধ্যে ৩-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে অজিরা।
পার্থে প্রথম টেস্টের পর মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টও শেষ হলো দুই দিনে। পার্থ টেস্ট শেষ হয়েছিল ৮৪৭ বলে, মেলবোর্নে লাগল ৮৫২ বল। অ্যাশেজে এর চেয়ে কম বলে টেস্ট শেষ হয়েছে মাত্র ৩টি।
সব মিলিয়ে এবারের অ্যাশেজের প্রথম ৪ টেস্ট শেষ হলো ১৩ দিনে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই দিনে শেষ হওয়া চতুর্থ টেস্ট এটি। প্রথমটি হয়েছিল এই মাঠেই, ১৯৩১ সালে। ৯৪ বছর পর মেলবোর্নে কোনো টেস্ট শেষ হলো দুই দিনে। অ্যাশেজে এক সিরিজে দুটি টেস্ট দুই দিনে শেষ হলো ১২৯ বছর পর।
ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৭৫ রানের। এই ম্যাচে আগের তিন ইংনিসের ব্যাটিং জানা থাকলে লক্ষ্যটা বড় মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আগের তিন ইনিংসে এত রান কোনো দলই করতে পারেননি। এমন লক্ষ্য টপকে যেতে ইংল্যান্ডের একটা ভালো শুরুর দরকার ছিল। পুরো সিরিজে ইংলিশ দুই ওপেনার ভালো শুরু এনে দিতে ব্যর্থ হলেও আজ পেরেছেন। জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট মিলে তোলেন ৫১ রান। ২৬ বলে ৩৪ রান করে স্টার্কের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হন ডাকেট।
ছোট লক্ষ্যে একটা ‘ক্যামিও’ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেটা খেলতে বোলার ব্রাইডন কার্সকে তিনে পাঠায় ইংল্যান্ড। তিনি অবশ্য সফল হতে পারেননি। আউট হন ৬ রান করে, ঝাই রিচার্ডসনের বলে।
দলীয় ১১২ রানে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফেরেন ক্রলি, স্কট বোল্যান্ডের বলে এলবিডব্লু হন। ইংল্যান্ড তখন এগোচ্ছিল প্রথমবার অ্যাশেজ খেলা জ্যাকব বেথেলের ব্যাটে। তবে দলীয় ১৩৭ রানে বোল্যান্ডের বলে আউট হন বেথেল (৪০)। রুটও খেলা শেষ করতে পারেননি। ১৫ রান করে রিচার্ডসনের বলে এলবিডব্লু হন। এরপর উইকেট দিয়ে আসেন স্টোকসও (২)। তবে জেমি স্মিথ (৩*) ও হ্যারি ব্রুক (১৮*) ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া দলীয় ২২ রানে হারায় প্রথম উইকেট। ‘নাইটওয়াচম্যান’ ওপেনার স্কট বোল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৬ রানে।
ব্যর্থ হন তিনে খেলা জ্যাক ওয়েদারাল্ড, তাঁকে ৫ রানে ফেরান স্টোকস। সেঞ্চুরি করতে ভুলে যাওয়া লাবুশেনও হয়েছেন আবার ব্যর্থ, টাংয়ের বলে আউট হন ৮ রানে। ওপেনার ট্রাভিস হেড ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেন।
দলীয় ৮২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে কার্সের বলে ফেরেন হেড। এরপর উসমান খাজা, অ্যালেক্স ক্যারিরাও ব্যর্থ। অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এক পাশে পড়ে ছিলেন, কিন্তু কঠিন উইকেটে অন্যরা সমর্থন দিতে পারেননি। স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ২৪ রানে। হেড, স্মিথ ছাড়া এই ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন শুধু ক্যামেরন গ্রিন, ১৯ রান।
প্রথম ইনিংসে ৪৫.২ ওভার খেলা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে পারে ৩৪.৩ ওভার। দুই ইনিংসে মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া খেলতে পেরেছে ৭৯.৫ ওভার—৪৭৯ বল। অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসে ১৯০০ সালের পরে যা চতুর্থ সর্বনিম্ন। দুই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া রান করেছে ২৮৪, এই শতকে অস্ট্রেলিয়ার এটি দুই ইনিংস মিলিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
৪ জানুয়ারি সিডনিতে শুরু হবে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট।
স্পোর্টস ডেস্ক 























