নিজস্ব প্রতিবেদক :
কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ৫ দফা আগামী তিন দিনের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ের সামনে অবস্থানরত জবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে নিজ অফিস থেকে নেমে এসে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে থাকে। তাদের হল নেই। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আমরা তিনদিনের মধ্যে হল করে দিতে পারবো না কিন্তু আর্মির কাছে হস্তান্তর করতে পারি। কিন্তু এর জন্য আমাদের বসতে হবে। আমরা তিনদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করবো। এবং যেভাবে দেওয়া যায় সেই কাজ করবো।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা যে এখনো কেন শিক্ষার্থীদের রাজপথ থেকে দাবি আদায় করতে হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হল নির্মাণ এবং নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ। এই ক্যাম্পাসের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। একনেক ও ক্যাবিনেট সভায় কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম ক্যাম্পাসের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছিল সেখান থেকে যেন এক ইঞ্চি জমিও কমানো না হয়।
শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যে একটা বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু তাদের কোনো হল নেই। তাদের শিক্ষাজীবন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে। আমি প্রতিটি ঘটনা জানি, কারণ আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জগন্নাথের শিক্ষার্থী আছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি যে, আপনাদের এখানে আসতে হয়েছে এবং আপনাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার বলেছি যে, এই আমলাতন্ত্র-সচিবালয় যেন ভুলে না যায় যে কাদের রক্তে, কাদের আত্মত্যাগে তারা আজ ওখানে বসেছে। তাই শিক্ষার্থীদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে এবং যৌক্তিক দাবির প্রতি সম্মান অবশ্যই করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীদের সেই সম্মান রাখতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আসে না। বরং তাদের যে আসতে হচ্ছে, তারা আসার আগে দাবি পূরণ হচ্ছে না, সেটাই আমাদের ব্যর্থতা।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যদিও এটা আমার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় না, কিন্তু যখন শুনেছি আপনারা এসেছেন আমি সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়েছি। আমি এসেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যিনি নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তাকে নিয়ে এসেছি। তার আজ প্রথম দায়িত্বের দিন, প্রথম কাজ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
তিনি আশ্বাস দেন, আপনাদের যে দাবি, ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে যুক্ত করা এবং কাজের ঠিকাদারির বিষয়টা বলেছেন সেনাবাহিনীকে দেওয়া, আমরা অবশ্যই এসব দাবি পূরণ করব। হল তিন দিনে তৈরি করে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু তিন দিনে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারব। আপনাদের সঙ্গে বসতে হবে কথা শুনতে হবে। ঠিকাদারের সঙ্গে আমরা এখনই কথা বলব এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে।
এর আগে কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের দাবিসহ পাঁচ দফা ও ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সচিবালয় সামনে অবস্থান দেন জবি শিক্ষার্থীরা। এখনো পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সচিবালের সামনে অবস্থান করছেন। এতে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে, তুমি কে, জবিয়ান, জবিয়ান’, ‘মুলা না ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম’, অধিকার না অন্যায়, অধিকার, অধিকারসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি হলো- স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে; অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে; সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।