রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ রংপুর থেকে তরুণেরা ডাক দিয়েছে দেশের মানুষকে এই ভয়াবহ সরকারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, লুটেরাদের বিরুদ্ধে। তারুণ্যের রোড মার্চ শুরু হয়েছে, সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় থেকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের রোড মার্চ উপলক্ষে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এক দফা দাবি যদি না মানা হয় তাহলে লাখ লাখ তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি একটাই- এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। তাই বিনীত অনুরোধ করব, এখন এই সংসদ ভেঙে দিন। দলীয় লোক দিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলছে তাদের অধীনে আগে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এবারো সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আদালতে গেলে জামিন দেয়া হয় না বিরোধী আন্দোলনকারী দলগুলোর নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের একদফা দাবি যদি না মানা হয় তাহলে লাখ লাখ তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের তরুণেরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি অংশ। অথচ তারাই আজকে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। চাকরি নাই, কর্ম নাই, ব্যবসা নাই। বিএনপির নাম গন্ধ থাকলে ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসায়ী পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোক ধ্বংস করছে। মহীয়সী নারী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারান্তরিন করে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এ দেশে আর নাই। তাঁর চিকিৎসা দেশের বাইরে করা দরকার। কিন্তু এই স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশনেত্রীকে বাইরে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না। অথচ এক এগারোর সময় কানের চিকিৎসার জন্য বর্তমান তিনি (শেখ হাসিনা) দেশের বাইরে গিয়েছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে রংপুরের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে তেভাগা আন্দোলন হয়েছিল, কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল। সেদিন নুরুলদীন ডাক দিয়েছিল, ‘কোনটে বাহে জাগো সবায়’। আজকে রংপুর থেকে তরুণরা ডাক দিয়েছে দেশের মানুষকে এই ভয়াবহ সরকারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, লুটেরারদের বিরুদ্ধে। এই তারুণ্যের রোডমার্চ শুরু হয়েছে, সরকার পতনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর আগে কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে কারণ তখন ভোটকেন্দ্রে শুধুমাত্র কুকুর ছিল। সুতরাং আমরা সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার কৌশল করে; জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে, গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাতে চায় তারা। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ, বিদ্যুৎ থাকছে না, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; সেচ ও কৃষিকাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। ব্যাংক খালি করে দিয়েছে, রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি করছে তারা। সবখানে চুরির কারণে রিজার্ভ কমে আসছে, অর্থনীতির চাকা চলছে না।
ফখরুল বলেন, এই সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। গতকাল রাতেও আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকরাও তাকে নিয়ে চিন্তিত। চিকিৎসরকরা বলছেন, এখানে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করার আর কোনো সুযোগ নেই। তার চিকিৎসার জন্য তাকে অতিদ্রুত বিদেশে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয় দেশের সবগুলো রাজনৈতিক জোট ঘোষণা দিয়েছে যে; এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকার বার বার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ অসহায় হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না, শুধু লোডশেডিং আর লোডশেডিং। কৃষি সেচ দিতে পারে না কৃষকেরা। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকার দলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। কেননা এই সরকার একটি প্রতারক, তারা জনগণের সঙ্গে বারবার প্রতারণা করছে। তারা বিগত সময়ে মতো এবারও একটা যেমন–তেমন নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এবার সেই সুযোগ হবে না। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। তাই বলতে চাই, সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। কেননা জনগণ আর এই সরকারকে একদিনের জন্যও দেখতে চায় না। মানুষ জেগেছে, মানুষ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরতে চায়।’
রোডমার্চ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু ও সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডনসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলটন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
পরে তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। রোডমার্চ রংপুর থেকে শুরু হয়ে দিনাজপুরে শেষ হবে। রোডমার্চে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে রংপুর বিভাগের বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।